পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
আধুনিক সাহিত্য

 শুভবিবাহে লেখিকা সেই ক্ষমতা প্রচুর পরিমাণে প্রকাশ করিয়াছেন। এমন সজীব সত্য চিত্র বাংলা কোনো গল্পের বইয়ে আমরা দেখি নাই। গ্রন্থে বর্ণিত অন্তঃপুর ও অন্তঃপুরিকাগণ যে লেখিকার বানানো, এ কথা আমরা কোনো জায়গাতেই মনে করিতে পারি নাই। তাহারাই দেদীপ্যমান সত্য এবং লেখিকা উপলক্ষমাত্র।

 এই বইখানির মধ্যে সামান্য একটুখানিমাত্র গল্প আছে এবং নায়ক-নায়িকার উপসর্গ একেবারেই নাই; তবু প্রথম খান-ত্রিশেক পাতা পড়া হইয়া গেলেই মনের ঔৎসুক্য শেষ ছত্র পর্যন্ত সমান সজাগ হইয়া থাকে। অথচ সমস্ত গ্রন্থে কলাকৌশল বা ভাষার ছটা একেবারেই নাই, কেবল জীবন এবং সত্য আছে। যাহা কিছু আছে সমস্তই সহজেই প্রত্যক্ষ এবং অনায়াসেই প্রত্যয়যোগ্য।

 গ্রন্থে বর্ণিত নারীগুলিকে অসামান্য ভাবে চিত্র করিবার চেষ্টামাত্র করা হয় নাই, অথচ তাহাদের চরিত্রে আমাদের মনকে পাইয়া বসিয়াছে, তাহাদের সুখদুঃখে আমরা কিছুমাত্র উদাসীন নই। যিনি ঘরের গৃহিণী, এই গ্রন্থের যিনি ‘দিদি', তিনি মোটাসোটা, সাদাসিধা প্রৌঢ়া স্ত্রীলোক; ছেলের উপার্জিত নৃতনলব্ধ ঐশ্বর্যে অহংকৃত; অথচ তাঁহার অন্তঃকরণে যে স্বাভাবিক স্নেহরস সঞ্চিত আছে তাহা বিকৃত হইতে পারে নাই—তিনি উপরে ধনীঘরের কর্তী, ভিতরে সরলহৃদয় সহজ স্ত্রীলোক। তাহার বিধবা কন্যা ‘রাণী’ কল্যাণের প্রতিমা, অথচ ইহার চিত্রে সচেষ্টভাবে বেশি করিয়া রঙ ফলাইবার প্রয়াস কোনো জায়গাতেই দেখা যায় না; অতি সহজেই ইনি ইহার স্থান লইয়া আছেন, নিতান্ত সামান্য ব্যাপারের মধ্যেই ইনি আপনার অসামান্যতাকে পরিস্ফুট করিয়া তুলিয়াছেন। লেখিকা ইহাকে আমাদের সম্মুখে খাড়া করিয়া দিয়া বাহবা লইবার জন্য কোথাও আমাদের মুখের দিকে তাকান নাই। আর সেই ‘পিসিমা, অনাথা, সন্তানহীনা—জনশূন্য বৃহৎ ঘরে অনাবশ্যক