পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫২
জাপানে-পারস্যে

এবং সেখানে অনুক্ষেত্রের পরিধি পরিমিত। সেই ছোটো জায়গায় যে আর্যের বাসপত্তন করলেন, তাদের মধ্যে একটি বিশুদ্ধ সংহতি রইল, অনার্যজনতার প্রভাবে তাঁদের ধর্মকর্ম বহু জটিল ও বিকৃত হল না। এশিয়ার এই বিভাগে কৃষ্ণবর্ণ নিগ্রো প্রায় জাতির বসতি ছিল তার প্রমাণ পুরাতন সাহিত্যে আছে—কিন্তু ইরানীয়দের আর্যত্বকে তারা অভিভূত করতে পারে নি।

 পারস্যের ইতিহাস যখন শাহনামার পুরাণকথা থেকে বেরিয়ে এসে স্পষ্ট হয়ে উঠল তখন পারস্যে আর্যদের আগমন হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। তখন দেখি আর্যজাতির দুই শাখা পারস্য ইতিহাসের আরম্ভ কালকে অধিকার করে আছে,—মীদিয় এবং পারসীক। মীদিয়েরা প্রথমে এসে উপনিবেশ স্থাপন করে তারপরে পারসীক। এই পারসীকদের দলপতি ছিলেন হখমানিশ। তাঁরই নাম অনুসারে এই জাতি গ্রীকভাষায় আকেমেনিড (Achaemenid) আখ্যা পায়। খৃষ্টজন্মের সাড়ে পাঁচ শ বছর পূর্বে আকেমনীয় পারসীকেরা মীদিয়দের শাসন থেকে সমস্ত পারস্যকে মুক্ত করে নিজেদের অধীনে একচ্ছত্র করে। সমগ্র পারস্যের সেই প্রথম অদ্বিতীর সম্রাট ছিলেন বিখ্যাত সাইরস, তাঁর প্রকৃত নাম খোরাস। তিনি শুধু যে সমস্ত পারস্যকে এক করলেন তা নয় সেই পারস্যকে এমন এক বৃহৎ সাম্রাজ্যের চূড়ায় অধিষ্ঠিত করলেন সে যুগে যার তুলনা ছিল না। এই বীরবংশের এক পরম দেবতা ছিলেন অহুরমজদা! ভারতীয় আর্যদের বরুণদেবের সঙ্গেই তাঁর সাজাত্য। বাহ্যিক প্রতিমার কাছে বাহ্যিক পূজা আহরণের দ্বারা তাঁকে প্রসন্ন করার চেষ্টাই তাঁর আরাধনা ছিল না। তিনি তাঁর উপাসকদের কাছ থেকে চেয়েছিলেন, সাধু চিন্তা, সাধু বাক্য ও সাধুকর্ম। ভারতবর্ষের বৈদিক আর্যদেবতার মতোই তার মন্দির ছিল না, এবং এখানকার মতই ছিল অগ্নিবেদী।