পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জুবেয়ার
১৬১

অনেক সময় সে’ই নিজে সর্বেসর্বা হইয়া উঠে। তখন সে বই পড়িয়া মনে হয় এ কেবল বই পড়িতেছি মাত্র, এগুলা কেবল লেখা। ভালো বই পড়িবার সময় মনে থাকে না বই পড়িতেছি; ভাব এবং তত্ত্বের সহিত মুখামুখি পরিচয় হয়, মধ্যস্থ পদার্থটা চোখেই পড়ে না—

 ‘অনেক লেখক আপনার স্টাইলটাকে ঝম্ ঝম্ করিয়া বাজাইতে থাকে, লোককে জানাইতে চায় তাহার কাছে সোনা আছে বটে।

 দুর্লভ আশাতীত স্টাইল ভালো, যদি জোটে। কিন্তু আমি পছন্দ করি, যে স্টাইলটিকে ঠিক প্রত্যাশা করা যায়।’

 —এ কথাটির মধ্যে গভীরতা আছে। অভাবনীয় আশাতিরিক্ত সৌন্দর্যকে ভালো বলিতেই হইবে; তথাপি তাহা মনের ভারস্বরূপ, তাহাতে শ্রান্তি আনে। কিন্তু যেখানে যেটি আশা করা যায় ঠিক সেইটি পাইলেই মন শান্তি ও স্বাস্থ্য অনুভব করে, তাহাকে বিস্ময় বা সুখের ধাক্কায় বারংবার আহত করিয়া ক্ষুব্ধ করে না। বাংলায় যে বচন আছে ‘সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো’ তাহারও এই অর্থ। স্বস্তির মধ্যে যে শান্তি ও গভীরতা, ব্যাপ্তি ও ধ্রুবত্ব আছে, সুখের মধ্যে তাহা নাই। এইজন্য বলা যাইতে পারে সুখ ভালো বটে, কিন্তু স্বস্তি তাহার চেয়েও প্রার্থনীয়।

 বৈশাখ ১৩০৮

১১