পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৬
জাপানে-পারস্যে

চিহ্নহীন মাঠের মধ্যে বিসর্পিত পথ দিয়ে। কিন্তু মানুষ কোথায়? চাষী কেন হাল লাঙল নিয়ে মাঠে আসে না? হাটের দিন হাট করতে যায় না কেউ; ফসলের ক্ষেত নিড়াবার বুঝি দরকার নেই? দূরে দূরে বন্দুকধারী পাহারাওয়ালা দাঁড়িয়ে, তার থেকে আন্দাজ করা যায়, ঐ দিগন্তের বাইরে অদৃশ্য নেপথ্যে কোথাও মানুষের নানা দ্বন্দ্ববিঘটিত সংসারযাত্রা চলেছে। মাঠে কোথাও বা ফসল, কোথাও বা বহুদূর ধরে আগাছা, তাতে উর্দ্ধপুচ্ছ শাদা শাদা ফুলের স্তবক। মাঝে মাঝে ছোটো নদী, কিন্তু তাতে আঁকড়ে নেই গ্রাম, মেয়েরা জল তোলে না, কাপড় কাচে না, স্নান করে না, গোরুবাছুর জল খায় না, নির্জন পাহাড়ের তলা দিয়ে চলে, যেন সন্তানহীন বিধবার মতো। অনেকক্ষণ পরে বিনা ভূমিকায় এসে পড়ে মাটির পাঁচিলে-ঘেরা গ্রাম, একটু পরেই আর তার অনুবৃত্তি নেই, আবার সেই শূন্য মাঠ, আর মাঠের শেষে ঘিরে আছে পাহাড়।

 পথে যেতে যেতে এক জায়গায় দেখি এই উচ্চভূমি হঠাৎ বিদীর্ণ হয়ে নেমে গেছে আর সেই গহ্বরতল থেকে খাড়া একটা পাহাড় উঠেছে। এই পাহাড়ের গায়ে স্তরে স্তরে খোপে খোপে মানুষের বাসা, ভাঙনধরা পদ্মার পাড়িতে গাঙশালিখের বাসার মতো। চারিদিক থেকে বিচ্ছিন্ন এই কোটর-নিবাসগুলিতে প্রবেশের জন্যে কাঠের তক্তা-ফেলা সংকীর্ণ সাঁকো। মানুষের চাকের মতো এই লোকালয়টির নাম ইয়েজ্‌দিখস্ত্‌।

 দুপর বেজেছে। ইস্ফাহানের পৌরজনের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা বহন করে মোটর রথে লোক এল। সেই অভ্যর্থনার সঙ্গে এই শারেজা গ্রামের একটি কবির কাব্য ছিল মিলিত। সেই কাব্যটির ইংরেজি তর্জমা, এইখানে লিখে দিই: