পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জাপানে
৭১

 আর বেশি না! শরৎকালে গাছের ডালে পাতা নেই, দুই-একটা ডাল পচে গেছে, তার উপরে কাক বসে। শীতের দেশে শরৎকালটা হচ্ছে গাছের পাতা ঝরে যাবার, ফুল পড়ে যাবার, কুয়াশায় আকাশ ম্লান হবার কাল—এই কালটা মৃত্যুর ভাব মনে আনে। পচা ডালে কালো কাক বসে আছে, এইটুকুতেই পাঠক শরৎকালের সমস্ত রিক্ততা ও ম্লানতার ছবি মনের সামনে দেখতে পায়। কবি কেবল সূত্রপাত করে দিয়েই সরে দাঁড়ায়। তাকে যে অত অল্পের মধ্যেই সরে যেতে হয়, তার কারণ এই যে, জাপানি-পাঠকের চেহারা দেখার মানসিক শক্তিটা প্রবল।

 এইখানে একটা কবিতার নমুনা দিই, যেটা চোখে দেখার চেয়ে বডো:

 স্বর্গ এবং মর্ত্য হচ্ছে ফুল, দেবতারা এবং বুদ্ধ হচ্ছেন ফুল—

 মানুষের হৃদয় হচ্ছে ফুলের অন্তরাত্মা।

 আমার মনে হয়, এই কবিতাটিতে জাপানের সঙ্গে ভারতবর্ষের মিল রয়েছে। জাপান স্বর্গমর্ত্যকে বিকশিত ফুলের মতো সুন্দর করে দেখছে—ভারতবর্ষ বলছে, এই যে এক বৃন্তে দুই ফুল,—স্বর্গ এবং মর্ত্য, দেবতা এবং বুদ্ধ, মানুষের হৃদয় যদি না থাকত, তবে এ ফুল কেবলমাত্র বাইরের জিনিস হত;—এই সুন্দরের সৌন্দর্যটিই হচ্ছে মানুষের হৃদয়ের মধ্যে।

 যাই হোক, এই কবিতাগুলির মধ্যে কেবল যে বাকসংযম তা নয়— এর মধ্যে ভাবের সংযম। এই ভাবের সংযমকে হৃদয়ের চাঞ্চল্য কোথাও ক্ষুব্ধ করছে না। আমাদের মনে হয়, এইটেতে জাপানের একটা গভীর পরিচয় আছে। এক কথায় বলতে গেলে, একে বলা যেতে পারে হৃদয়ের মিতব্যয়িতা।

 মানুষের একটা ইন্দ্রিয়শক্তিকে খর্ব করে আর-একটাকে বাড়ানো চলে,