পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩৮
সাহিত্য

এক দেবতার বিগ্রহে আর-এক দেবতার সঞ্চার, এক সম্প্রদায়ের তীর্থে আরএক সম্প্রদায়ের প্রাদুর্ভাব, এমনি একটা বিপর্যয়ব্যাপার ঘটিতেছিল। ঠিক সেইসময়কার কথা সাহিত্যে আমরা স্পষ্ট করিয়া খুঁজিয়া পাই না।

 ইহা দেখিতেছি, বৈদিক কালের দেবতন্ত্রে মহাদেবের আধিপত্য নাই। তাহার পরে দীর্ঘকালের ইতিহাসহীন নিস্তব্ধতা কাটিয়া গেলে দেখিতে পাই, ইন্দ্র ও বরুণ ছায়ার মতো অস্পষ্ট হইয়া গেছে এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে দ্বন্দ ও মিলন ঘটিতেছে। এই দৈবসংগ্রামে ব্রহ্মা সর্বপ্রথমেই পূজাগৃহ হইতে দূরে আশ্রয় লইলেন, বিষ্ণু নানা পরিবর্তনের মধ্যে নানা আকারে নিজের দাবি রক্ষা করিতে লাগিলেন, এবং মহেশ্বর এক সময়ে অধিকাংশ ভারত অধিকার করিয়া লইলেন।

 এই-সকল দেবদ্বন্দ্বের মূল কোথায় তাহা অনুসন্ধানযোগ্য। ভারতবর্ষের কটাহে আর্য অনার্য নানা জাতির সম্মিশ্রণ হইয়াছিল। এক-এক সময়ে এক-এক জাতি ফুটিয়া উঠিয়া আপন আপন দেবতাকে জয়ী করিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। অনবরত বিপ্লবের সময় হিন্দুর প্রতিভা সমস্ত বিরোধবিপ্লবের মধ্যে আপনার ঐক্যসূত্র বিস্তার করিয়া নানা বৈপরীত্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে আর্য-অনার্যের সমন্বয়-স্থাপনের চেষ্টা করিতেছিল।

 কথাসরিৎসাগরে আছে, একদা ব্রহ্মা ও বিষ্ণু হিমাদ্রিপাদমূলে কঠোর তপস্যা-সহকারে ধূর্জটির আরাধনায় নিযুক্ত হইয়াছিলেন। শিব তুষ্ট হইয়া বর দিতে উগষ্ঠত হইলে, ব্রহ্মা শিবকেই নিজের পুত্ররূপে লাভ করিবার প্রার্থনা করিলেন। এই অনুচিত আকাঙ্ক্ষার জন্য তিনি নিন্দিত ও লোকের নিকট অপূজ্য হইলেন। বিষ্ণু এই বর চাহিলেন, যেন আমি তোমারই সেবাপর হইতে পারি। শিব তাহাতে সন্তুষ্ট হইয়া বিষ্ণুকে নিজের অর্ধাঙ্গ করিয়া লইলেন। সেই অর্ধাঙ্গই শিবের শক্তিরূপিণী পার্বতী।