পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাছে ফেরবার জন্যে ভারি মন ছট্‌ফট্ করত। আজকাল কেবল মনে হয় বাড়ির মত এমন জায়গা আর নেই— এবারে বাড়ি ফিরে গিয়ে আর কোথাও নড়বনা। আজ এক হপ্তা বাদে প্রথম স্নান করেছি। কিন্তু স্নান করে কোন সুখ নেই— সমুদ্রের নোনা জলে নেয়ে সমস্ত গা চট্‌চট্‌ করে— মাথার চুল গুলো একরকম বিশ্রি আটা হয়ে জটা পাকিয়ে যায়— গা কেমন করে। মনে করচি যতদিন না জাহাজ ছাড়ব আর স্নান করব না। ইউরোপে পৌঁছতে এখনো হপ্তাখানেক আছে— একবার সেইখানে পৌঁছে ডাঙ্গায় পা দিলে বাঁচি। এই দিন রাত্রি সমুদ্র আর ভাল লাগে না। আজকাল যদিও সমুদ্রটা বেশ ঠাণ্ডা হয়েচে, জাহাজ তেমন দুল্‌চে না, শরীরেও কোন অসুখ নেই— সমস্ত দিন জাহাজের ছাতের উপরে একটা মস্ত কেদারার উপরে পড়ে, হয় লোকেনের সঙ্গে গল্প করি, নয় ভাবি, নয় বই পড়ি। রাত্তিরেও ছাতের উপরে বিছানা করে শুই, পারৎপক্ষে ঘরের ভিতরে ঢুকিনে। ঘরের মধ্যে গেলেই গা কেমন করে ওঠে। কাল রাত্তিরে আবার হঠাৎ খুব বৃষ্টি এল— যেখানে বৃষ্টির ছাঁট নেই সেইখানে বিছানাটা টেনে নিয়ে যেতে হল। সেই অবধি এখন পর্যন্ত ক্রমাগতই বৃষ্টি চল্‌চে। কাল বেড়ে রোদ্দুর ছিল। আমাদের জাহাজে দুটো তিনটে ছোট ছোট মেয়ে আছে— তাদের মা মরে গেছে, বাপের সঙ্গে বিলেত যাচ্চে। বেচারাদের দেখে আমার বড় মায়। করে। তাদের বাপটা সর্ব্বদা ভাদের কাছে কাছে নিয়ে বেড়াচ্চে— ভাল করে কাপড় চোপড় পরাতে পারেনা, জানে