পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে যেতে পারেন নি, তবে অল্পই বাকি ছিল । দুঃখের বিষয়, বাবার মৃত্যুর পর যখন তার সমস্ত কাগজপত্র রবীন্দ্রসদনে দেওয়া হল তখন এই খাতাটি পাওয়া গেল না । ...শিলাইদহে থাকতে বাবা আমাদের লেখাপড়া শেখাবার দিকে যেমন নজর দিয়েছিলেন, অন্য দিকে মা চেষ্টা করতেন আমাদের সবরকম ঘরকন্নার কাজ শেখাতে । তার প্রণালী ছিল বেশ নতুন রকমের । রবিবার দিন তিনি চাকরবামুন সকলকে ছুটি দিতেন। সংসারের সমস্ত কাজ আমাদের করতে হত । রান্নার কাজে আমার খুব উৎসাহ বোধ হত – রান্না কেমন হল, তা বোঝবার জন্য রাধুনির মাঝে মাঝে চেখে দেখার স্বাধীনতায় কেউ তো বাধা দিতে পারে না । • • • লেখার ফঁাকে ফঁাকে যখন বাবাকে গান পেয়ে বসত— আমলাদিদিকে কলকাতা থেকে নিয়ে আসতেন । দিনের বেলায় অমলাদিদি মায়ের সঙ্গে রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন । মুখরোচক নানারকম ঢাকাইরান্নাতে তার হাতযশ ছিল— মা তার কাছ থেকে সেই-সব রান্না শিখে নিতেন । আর মা শেখাতেন তাকে যশোহর অঞ্চলের নিরামিষ ব্যঞ্জন রাধার পদ্ধতি। সন্ধে হলেই, অন্য-সব কাজ ফেলে গান শোনবার জন্য সবাই সমবেত হতেন । মাঝিরা জলিবোটটা বজরার গায়ে বেঁধে দিয়ে যেত। তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে জানলা দিয়ে টপকে সেই বোটটাতে গিয়ে বসতুম। স্বরেনদাদার হাতে এসরাজ থাকত। জলিবোট খুলে মাঝ দরিয়ায় নিয়ে গিয়ে নোঙর ফেলে রাখা হত । তারপর শুরু হত গান – পালা করে বাবা ও অমলাদিদি গানের পর গান গাইতে থাকতেন । আকাশের সীমান্ত পর্যন্ত অধারিত জলরাশি, গানের সুরগুলি তার উপর দিয়ে ঢেউ খেলিয়ে গিয়ে কোন স্থদুরে যেন মিলিয়ে যেত, আবার ওপারের গাছপালার ধাক্কা খেয়ে তার মৃদু প্রতিধ্বনি আমাদের কাছে ফিরে আসত। ক্রমে রাত্রি গভীর হলে চারি দিক নিঝুম হয়ে আসত। নৌকা চলাচল তখন বন্ধ । বোটের > ? デ