পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে, মানুষ যত বড়ই হউক, নিয়তির হাত হইতে অব্যাহতির কোন উপায় নাই ; রোগ-শোকের কাছে বৃহৎ ক্ষুদ্র বা ভাল-মনোর ভিন্ন বিচার নাই । ঐ সময় নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথও ঐ স্থানে উপস্থিত ছিলেন।... ...কবি মাঝে মাঝে নীচে আসিতেছিলেন এবং কিয়ৎক্ষণের জন্য মহারাজকে দু’ট একটি কথা বলিয়া বা ডাক্তার আসিলে, তাহার সঙ্গে উপরে উঠিয়া যাইতেছিলেন। তাহার সেদিনকার মূৰ্ত্তিটি আমার মনে আছে । বাকৃবিরল গম্ভীর মুখশ্ৰী সংযম-কঠিন চেষ্টায় যেন আত্মসংবরণ করিয়া রাখিয়াছে । চোখে অশ্রু নাই। নাসিকায় দীর্ঘশ্বাস নাই ; ঈষৎ আরক্ত মুখমণ্ডলে অবৃষ্টিসংরস্তু আসন্ন আষাঢ়েরই যেন স্তম্ভিত পূৰ্ব্বাভাস। ক্ষণে ক্ষণে ঈষৎ স্মিতভাব, রোদনেরই যাহা অব্যক্ত রূপান্তর। বিকার-চাঞ্চল্যহীন সেই মুখের প্রতি চাহিয়া মনে হইতেছিল, কি দুঃসহ বেদনাই না জানি তাহার অন্তরালে পুঞ্জীভূত হইয়া রহিয়াছে। বেলা বারোটার সময় কবিও উপরে গেলেন, মহারাজও আমাকে আমার বাসায় নামাইয়া দিয়া গৃহে ফিরিলেন।” মৃণালিনী দেবীর অকালমৃত্যুর পর সেই দুঃখাভিঘাত কবি কিভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহার আভাস পাওয়া যায় সেই সময়ে দীনেশচন্দ্র সেন এবং মহারাজকুমার ব্রজেন্দ্রকিশোর দেববর্মাকে লিখিত র্তাহার দুইখানি অন্তরঙ্গ পত্রে ; চিঠিপত্র ১০ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা’ ( ১৩৬৮) গ্রন্থ হইতে তাহ বর্তমান গ্রন্থে (পৃ ১০৫-০৬ ) সংকলিত হইয়াছে। শিশু কাব্যের অধিকাংশ কবিতা খোকার উদ্দেশে রচিত । কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনকালে, সম্পাদক মোহিতচন্দ্র সেনের পত্নী এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন জানিতে পারিয়া, রবীন্দ্রনাথ মোহিতচন্দ্র সেনকে যে পত্র লেখেন তাহাতেও মৃণালিনী দেবীর স্মৃতি উদ্ভাসিত। প্রাসঙ্গিক-বোধে বিশ্বভারতী পত্রিকা’র কাতিক ১৩৪৯ সংখ্যা (দেশ, সাহিত্য সংখ্যা ১৩৭৮, পৃ: ৪৬ ) হইতে পত্রটি এই গ্রন্থে (পৃ ১০৬-০৭ ) সংকলিত হইয়াছে। > || > * S ११