পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক কথায় কত কথা এসে গেল তার ঠিক নেই। যাক, আমার মনে হয়, কবিপ্রিয়া যদি অকালে না চলে যেতেন তবে কবির শান্তিনিকেতনের আশ্রম-বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা মূর্ত হয়ে উঠত সকল দিক দিয়ে। ছেলেরা ঘর ছেড়ে এসে ঘর পেত, মাতৃস্নেহ পেত, রোগে সেবাযত্ন পেত, আর মুখে-দুঃখে সহানুভূতি পেত। কবি যে এ অভাবে কত অসহায় হয়েছিলেন তা তার কথায় একদিন আমি বুঝেছিলুম । যখন আমার ছেলেকে রাখতে আমি শান্তিনিকেতনে যাই তখন আমায় বলেছিলেন, “তোমাদের ছেলেরা যে যত্বে মানুষ, এখানে কি থাকতে পারবে ? এখানে অনেক কষ্ট । আমি তাদের সব দিতে পারি, মাতৃস্নেহ তো দিতে পারি না | রখীর মা সে-বিষয়ে আমায় অসহায় করে রেখে গেছেন ।” তার দীর্ঘদিন আগে তার মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু তখনে সে-অভাব তিনি বোধ করছেন । কবি প্রিয়া স্বগত হবার অনেকদিন পর কী একটা কারণে কবির সংসারে একটা ক্ষণিক বিপ্লব ঘটে । তখন একদিন তিনি আমার মেজদিদিকে বলেছিলেন, “দেখো, অমলা, মানুষ মরে গেলেই যে একেবারে হারিয়ে যায়, জীবিত প্রিয়জনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সে-কথা আমি বিশ্বাস করি না । তিনি এতদিন আমাকে ছেড়ে গেছেন, কিন্তু যখনই আমি কোনো-একটা সমস্যায় পড়ি যেটা এক মীমাংসা কর। আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তখনই আমি তার সান্নিধ্য অনুভব করি । শুধু তাই নয়, তিনি যেন এসে আমার সমস্যার সমাধান করে দেন । এবারেও আমি কঠিন সমস্যায় পড়েছিলাম, কিন্তু এখন আর আমার মনে কোনো দ্বিধা নেই ” “কৰিপ্রিয়া” ‘বিশ্বভারতী পত্রিকা’, বৈশাখ-আষাঢ় ১৩৪২, পৃ. ৪৪-৪৯ > @ 8