পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারিবারিক জীবনের কথা খুব কমই শোনা যেত। তবে ইদানীং মাঝে মাঝে বলতেন । বিশেষ করে যে সময়ে শান্তিনিকেতন শুরু করেছিলেন সেই সময়ের কথা বলতে বলতে যেন তিনি সেই তীব্র দুঃখের সম্মুখীন হয়ে থেমে যেতেন । তিনি তো সন্ন্যাসী ছিলেন না এবং অন্যান্য কবিদের মত খেয়াল খুশির উদাম মুক্তিতে জীবন ভাসিয়ে দেননি। সাধারণ গৃহস্থের মত সংসারের ভারও তাকে পুরোদমেই বইতে হয়েছে। বলতেন, “তোমাদের এখনকার মত আমরা এত বড়মানুষ ছিলাম না । এখন তো তোমাদের দেখি কিছুতেই কুলোয় না। আমার বরাদ্দ ছিল ২০০, কী ২৫০ । তাই এনে ছোটবোঁকে দিয়ে দিতুম, ব্যস্। তিনি যা খুশি করতেন, সংসার চালাতেন । আমার সেদিকে কখনো কিছু ভাবতে হ’ত না । ---প্রত্যেকের সমস্ত ব্যবস্থা, পড়ান, বিবাহ, এমন-কি তিনটি সন্তানের মৃত্যুর দুঃখও একলাই বহন করতে হয়েছে। বেলার বিবাহ তার [ মৃণালিনীর ] মৃত্যুর পূর্বে হয়েছিল। সবই করেছি কিন্তু জালে জড়াইনি । দূরের থেকে করেছি। ছেলেদের মানুষ করা, তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা, সে করেছি, কিন্তু সে যেন একটা intellectual task, সেটা বুদ্ধি বিচার বিবেচনা দিয়ে করেছি পুরুষের মত ভাবেই। রখীদের পড়াতে গিয়েই তো শান্তিনিকেতনের শুরু হ’ল । তখন অবশু তিনি ছিলেন এবং যোগও দিয়েছিলেন আমার কাজে । এখনকার ছেলেমেয়েদের মত আমরা অত খুঁতখুঁতে ছিলুম না। আধুনিকভাবে আমাদের বিবাহ হয়নি তো, তাতে কিছুই এসে যায়নি। একটা গভীর শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল । তিনি তো চেয়েছিলেন আমার শান্তিনিকেতনের কাজে সঙ্গিনী হবার । বিশেষ ক'রে ইদানীং, অর্থাৎ শেষের দিকে তার একান্ত আগ্রহ হয়েছিল আমার কাজ করবার । কিন্তু “সে’তে হ’ল না— অল্প পরেই তার সেই ভয়ানক অসুখ হ’ল । -- ...তিনি চলে গেলেন তখন আমার এক মুহূর্ত অবসর ছিল না। শান্তিনিকেতন শুরু হয়েছে, হাতে পয়সা নেই, ঋণের পর ঋণ বোঝার মত » ፃ ¢