পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রায় দু-মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন ; ভাড়া-করা নার্সদের হাতে পত্নীর শুশ্ৰুষার ভার কবি এক দিনের জন্যও দেন নাই । স্বামীর সেবা পাওয়া কত সৌভাগ্যের, সাধবী নারীমাত্রই জানেন। পত্নীর প্রতি স্নেহ কবির প্রকাশ পেয়েছে তার শেষ শয্যায় চূড়ান্তরূপে। তখন ইলেকট্রিক ফ্যানের স্বষ্টি হয় নি দেশে। হাতপাখা হাতে ধরে দিনের পর দিন রাতের পর রাত পত্নীকে কবি বাতাস দিতেন, এক মুহূর্ত হাতের পখা না ফেলে | ভাড়াটে শুশ্রীষণকারিণীর প্রচলন তখন ঘরে ঘরে ; কবির ঘরে তার ব্যত্যয় ঘটল প্রথম । মায়ের বাড়াবাড়ি রোগের সময় ছেলেগুলিকে রেখে গিয়েছিলেন কবি শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে । আচ্ছন্ন অবস্থায় কবিপত্নী অনেকবার বলতেন, “আমাকে বলেন ঘুমাও ঘুমাও, শমীকে রেখে এলেন বিদ্যালয়ে, আমি কি ঘুমাতে পারি তাকে ছেড়ে ! বোঝেন না সেটা " জননীর শেষ সন্তান শমী তখন শিশু । ছেলেদের সে সময় যত্নে ও সাবধানে রাখার পক্ষে তার বিদ্যালয়ই উপযুক্ত স্থান, কবি বুঝেছিলেন । মৃত্যুর ছায়া তাদের মনে ঘনিয়ে আসবে সেটা যেন কবি সইতে পারতেন না। সন্তানস্নেহ কবির অপরিমেয় । প্রথম সন্তান কন্যাটিকে পিতা হয়েও তিনি মাতৃস্নেহে পালন করেছিলেন ধাত্রীরূপে। পত্নীর বয়স ছিল কম, কবি যেন ভরসা পেতেন না, প্রথম সন্তানের সম্যকৃ যত্ন পাছে তিনি করতে না পারেন ভেবে । শিশুকে দুধ খাওয়ানো, কাপড় পরানে, বিছানা বদলানো, কবি সব করতেন নিজের হাতে । এ-সবই আমাদের চোখে দেখা । সন ১৩০৯ সালে ৭ই আগ্রহায়ণ (২৩ নবেম্বর, ১৯০২) রবিবার, শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক ১১ মাস পরে, মাত্র উনত্রিশ বৎসর বয়সে কবিপত্নী পরলোক গমন করেন, আমি সেদিন অসুস্থ, শয্যাশায়ী । নিজে সে সময়ে যেতে পারি নি ; রাত্রে আমার স্বামী এসে বললেন, “খুড়ির মৃত্যু হয়েছে, কাকামশাই একলা ছাদে চলে গেছেন, বারণ করেছেন » 8ፃ