পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ল্যাবরেটরি
৮৩৫

ঘাতিনী হয়ে। আমি এর রক্ষক চাই, তাই বলছিলাম রেবতীকে।”

 “চেষ্টা করে দেখলে?”

 “দেখেছি, হাতে হাতে ফল পাবার আশা আছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিঁকবে না।”

 “ওঁর পিসিমা যেমনি শুনবেন রেবতীকে টেনেছি কাছে, অমনি তাঁকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবার জন্যে ছুটে আসবেন। ভাববেন, আমার মেয়ের সঙ্গে ওঁর বিয়ে দেবার ফাঁদ পেতেছি।”

 “দোষ কী, হলে তো ভালোই হত। কিন্তু তুমি যে বলেছিলে, বেজাতে মেয়ের বিয়ে দেবে না।”

 “তখনও আপনার মন জানতুম না, তাই মিথ্যে কথা বলেছিলাম। খুবই চেয়েছিলাম। কিন্তু ছেড়েছি সেই মতলব।”

 “কেন।”

 “বুঝতে পেরেছি, ও ভাঙন-ধরানো মেয়ে। ওর হাতে যা পড়বে তা আস্ত থাকবে না।”

 “কিন্তু ও তো তোমারই মেয়ে।”

 “আমারই মেয়ে তো বটে, তাই তো ওকে আঁতের ভিতর থেকেই চিনি।”

 অধ্যাপক বললেন, “কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে কেন যে, মেয়েরা পুরুষের ইন্‌স্পিরেশন জাগাতে পারে।”

 “আমার সবই জানা আছে। পুরুষের খোরাকে আমিষ পর্যন্ত ভালোই চলে, কিন্তু মদ ধরালেই সর্বনাশ। আমার মেয়েটি মদের পাত্র, কানায় কানায় ভরা।”

“তা হলে কী করতে চাও বলো।”

 “আমার ল্যাবরেটরি দান করতে চাই পাব্লিককে।”

 “তোমার একমাত্র মেয়েকে এড়িয়ে দিয়ে?”

 “মেয়েকে? ওকে দান করলে সে দান পৌঁছবে কোন্ রসাতলে কী করে জানব? আমার ট্রাস্ট্ সম্পত্তির প্রেসিডেণ্ট্ করে দেব রেবতীকে। তাতে তো পিসির আপত্তি হতে পারবে না?”

 “মেয়েদের আপত্তির যুক্তি যদি ধরতেই পারব তা হলে পুরুষ হয়ে জন্মাতে গেলাম কেন? কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি নে, ওকে যদি জামাই না করবে তা হলে প্রেসিডেণ্ট্ করতে চাও কেন।”

 “শুধু যন্ত্রগুলো নিয়ে কী হবে? মানুষ চাই ওদের প্রাণ দিতে। আর-একটা কথা এই— আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একটাও নতুন যন্ত্র আনা হয় নি। টাকার অভাবে নয়। কিনতে হলে একটা লক্ষ্য ধরে কিনতে হয়। খবর জেনেছি, রেবতী ম্যাগ নেটিজ ম্, নিয়ে কাজ করছেন। সেই পথে সংগ্রহ এগিয়ে চলুক, ষত দাম লাগে লাগক-না।”

 “কী আর বলব, পুরুষমানুষ যদি হতে তোমাকে কাঁধে করে নিয়ে নেচে বেড়াতুম। তোমার স্বামী রেল-কোম্পানির টাকা চুরি করেছিলেন, তুমি চুরি করে নিয়েছ তাঁর পুরুষের মনখানা। এমন অদ্ভূত কলমের-জোড়-লাগানো বুদ্ধি আমি কখনও দেখি নি। আমারও পরামর্শ নেওয়া তুমি যে দরকার বোধ কর, এই