পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩৬
গল্পগুচ্ছ

আশ্চর্য।”

 “তার কারণ আপনি যে খুব খাঁটি, ঠিক কথা বলতে জানেন।”

 “হাসালে তুমি। তোমাকে বেঠিক কথা বলে ধরা পড়ব এত বড়ো নিরেট বোকা আমি নই। তা হলে লাগা যাক এবার জিনিসপত্র ফর্দ করা, দর যাচাই করা, ভালো উকিল ডেকে তোমার স্বত্ব বিচার করা, আইনকানুন বেঁধে দেওয়া ইত্যাদি অনেক হাঙ্গামা আছে।”

 “এ-সব দায় কিন্তু আপনারই।”

 “সেটা হবে নামমাত্র। বেশ ভালো করেই জান, যা তুমি বলাবে তাই বলব, যা করাবে তাই করব। আমার লাভটা এই যে, দু বেলা দেখা হবে তোমার সঙ্গে। তোমাকে যে কী চক্ষে দেখেছি তুমি তো জান না।”

 সোহিনী চৌকি থেকে উঠে এসে ধাঁ করে এক হাতে চৌধুরীর গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমো খেয়ে চট্ করে সরে গেল, ভালোমানুষের মতো বসল গিয়ে চৌকিতে।

 “ঐ রে, সর্বনাশের শুরু হল দেখছি।”

 “সে ভয় যদি একটুও থাকত তা হলে কাছেও এগতুম না। এ বরাদ্দ আপনার জুটবে মাঝে মাঝে।”

 “ঠিক বলছ?”

 “ঠিকই বলছি। আমার এতে খরচ নেই, আপনারও যে বেশি কিছু পাওনা আছে, মুখের ভাব দেখে তা বোধ হচ্ছে না।”

 “অর্থাৎ বলতে চাও, এ হচ্ছে মরা কাঠে কাঠঠোকরার ঠোকর দেওয়া।—চললুম উকিলবাড়িতে।”

 “কাল একবার আসবেন এ পাড়াতে।”

 “কেন, কী করতে?”

 “রেবতীর মনে দম দিতে।”

 “আর নিজের মনটা খুইয়ে বসতে।”

 “মন কি আপনার একলারই আছে?”

 “তোমার মনের কিছু বাকি আছে নাকি?”

 “উচ্ছিষ্ট অনেক পড়ে আছে।”

 “তাতে এখনও অনেক বাঁদর নাচানো চলবে।”

তার পরদিনে রেবতী ল্যাবরেটরিতে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত বিশ মিনিট আগে এসেই উপস্থিত। সোহিনী প্রস্তুত ছিল না, আটপৌরে কাপড়েই তাড়াতাড়ি চলে এল ঘরে। রেবতী বুঝতে পারলে গলদ হয়েছে। বললে, “আমার ঘড়িটা ঠিক চলছে না দেখছি।”

 সোহিনী সংক্ষেপে বললে, “নিশ্চর।”

 এক সময়ে একটু কী শব্দ শুনে রেবতী মনে মনে চমকে উঠে দরজার দিকে