পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৪৩

বসন্তে উঠিত ফুটে বনে বেলফুল,
কেহ-বা পরিত মালা কেহ-বা ভরিত ডালা
করিত দক্ষিণ বায়ু অঞ্চল আকুল।

বরষায় ঘনঘটা, বিজুলি খেলায়;
প্রান্তরের প্রান্ত দেশে মেঘে বনে যেত মিশে,
জুঁইগুলি বিকশিত বিকাল বেলায় ৷

বর্ষ আসে বর্ষ যায়, গৃহকাজ করি;
সুখদুঃখ ভাগ লয়ে প্রতিদিন যায় বয়ে,
গোপন স্বপন লয়ে কাটে বিভাবরী।

লুকানো প্রাণের প্রেম পবিত্র সে কত,
আঁধার হৃদয়তলে মানিকের মতো জ্বলে,
আলোতে দেখায় কালো কলঙ্কের মতো।

ভাঙিয়া দেখিলে ছি ছি নারীর হৃদয়,
লাজে ভয়ে থরথর ভালোবাসা সকাতর,
তার লুকাবার ঠাঁই কাড়িলে নিদয়।

আজিও তো সেই আসে বসন্ত শরৎ।
বাঁকা সেই চাঁপাশাখে সোনা ফুল ফুটে থাকে,
সেই তারা তোলে এসে, সেই ছায়াপথ।

সবাই যেমন ছিল, আছে অবিকল,
সেই তারা কাঁদে হাসে, কাজ করে, ভালোবাসে,
করে পূজা, জ্বালে দীপ, তুলে আনে জল।

কেহ উঁকি মারে নাই তাহাদের প্রাণে,
ভাঙিয়া দেখেনি কেহ হৃদয়-গোপনগেহ,
আপন মরম তারা আপনি না জানে।