পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
চয়নিকা

সকলে মিলিয়া শেষে হয় একাকার
সমস্ত গগনতল করে অধিকার।

সেদিনের পরে গেছে কত শতবার
প্রথম দিবস, স্নিগ্ধ নব বরষার।
প্রতিবর্ষা দিয়ে গেছে নবীন জীবন
তোমার কাব্যের ’পরে, করি বরিষন
নববৃষ্টিবারিধারা; করিয়া বিস্তার
নবঘনস্নিগ্ধচ্ছায়া; করিয়া সঞ্চার
নব নব প্রতিধ্বনি জলদ-মন্দ্রের
স্ফীত করি’ স্রোতোবেগ তোমার ছন্দের
বর্ষা-তরঙ্গিণী-সম।

কতকাল ধ’রে
কত সঙ্গীহীন জন, প্রিয়াহীন ঘরে,
বৃষ্টিক্লান্ত বহুদীর্ঘ লুপ্ত-তারাশশী
আষাঢ় সন্ধ্যায়, ক্ষীণ দীপালোকে বসি’
ওই ছন্দ মন্দ মন্দ করি’ উচ্চারণ
নিমগ্ন করেছে নিজ বিজন-বেদন।
সে-সবার কণ্ঠস্বর কর্ণে আসে মম
সমুদ্রের তরঙ্গের কলধ্বনি সম
তব কাব্য হতে।

ভারতের পূর্বশেষে
আমি ব’সে আজি; যে শ্যামল বঙ্গদেশে
জয়দেব কবি, আর এক বর্ষাদিনে
দেখেছিলা দিগন্তের তমাল বিপিনে
শ্যামচ্ছায়া, পূর্ণ মেঘে মেদুর অম্বর।