পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
চয়নিকা

সোনার তরী

গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।
কুলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হোলো সারা,
ভরা নদী ক্ষুর-ধারা খর-পরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো ক্ষেত আমি একেলা,
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘ-ঢাকা প্রভাত বেলা।
এ পারেতে ছোটো ক্ষেত আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চ’লে যায়, কোনোদিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু-ধারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে।
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও, যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কৃূলেতে এসে।