পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিচের তলায় কাজ করতে বাধ্য এবং সেই কাজেরই যােগ্য, যথাসম্ভব তাতে শিক্ষাস্বাস্থ্য-সুখসুবিধার জন্যে চেষ্টা করা উচিত।

 মুশকিল এই, দয়া করে কোন স্থায়ী জিনিস করা চলে না; বাইরে থেকে উপকার করতে গেলে পদে পদে তার বিকার ঘটে। সমান হতে পারলে তবেই সত্যকার সহায়তা সম্ভব হয়। যাই হােক, আমি ভালো করে কিছুই ভেবে পাইনি—অথচ অধিকাংশ মানুষকে তলিয়ে রেখে, অমানুষ করে রেখে তবেই সভ্যতা সমুচ্চ থাকবে এ-কথা অনিবার্য বলে মেনে নিতে গেলে মনে ধিক্কার আসে।

 ভেবে দেখােনা, নিরন্ন ভারতবর্ষের অন্নে ইংলণ্ড পরিপুষ্ট হয়েছে। ইংলণ্ডের অনেক লােকেরই মনের ভাব এই যে ইংলণ্ডকে চিরদিন শোষণ করাই ভারতবর্ষের সার্থকতা। ইংলণ্ড বড় হয়ে উঠে মানবসমাজে বড়াে কাজ করছে এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে চিরকালের মতো একটা জাতিকে দাসত্বে বন্ধ করে রেখে দিলে দোষ নেই। এই জাতি যদি কম খায় কম পরে তাতে কী যায় আসে, তবুও দয়া করে তাদের অবস্থার কিছু উতি করা উচিত এমন কথা তাদের মনে জাগে। কিন্তু এক-শ বছর হয়ে খোল, না পেলুম শিক্ষা, না পেলুম স্বাস্থ্য, না পেলুম সম্পদ।

 প্রত্যেক সমাজের নিজের ভিতরেও এই একই কথা। যে-মানুষরে মানুষ সম্মান করতে পারে না সে-মানুষকে মানুষ উপকার করাতে অক্ষম। অন্তত যখনই নিজের স্বার্থে এসে ঠেকে তখনই মারামারি কাটাকাটি বেধে যায়। রাশিয়ায় একেবারে গােড়া ঘেঁষে এই সমস্যা সমাধান করবার চেষ্ট চলছে। তার শেষ ফলের কথা এখনও বিচার করবার সময় হয় নি, কিন্তু আপাতত যা চোখে পড়ছে তা দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। আমাদের সকল সমস্যার সব-চেয়ে বড়ো রাস্তা হচ্ছে শিক্ষা। এতকাল সমাজের অধিকাংশ লােক শিক্ষার পূর্ণ সুযােগ থেকে বঞ্চিত—ভারতবর্ষ