পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বেড়িয়েছে, পরিত্রাণের জন্যে পুরুতপাণ্ডাকে দিয়েছে ঘুষ, আর মনিবের কাছে ধুলােয় মাথা লুটিয়ে আত্মাবমাননা করেছে তাদেরই ভিড়ে থিয়েটারে জায়গা পাওয়া যায় না।

 আমি যেদিন অভিনয় দেখতে গিয়েছিলুম সেদিন হচ্ছিল টলস্টয়ের রিসারেক্সান। জিনিসটা জনসাধারণের পক্ষে সহজে উপভোগ্য বলে মনে করা যায় না। কিন্তু শ্রোতারা গভীর মনােযােগের সঙ্গে সম্পূর্ণ নিঃশব্দে শুনছিল। অ্যাংলােস্যাক্সন চাষীমজুরশ্রেণীর লােকে এ-জিনিস রাত্রি একটা পর্যন্ত এমন স্তব্ধ শান্তভাবে উপভােগ করছে এ-কথা মনে করা যায় না, আমাদের দেশের কথা ছেড়েই দাও।

 আর-একটা উদাহরণ দিই। মস্কৌ শহরে আমার ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল। এ-ছবিগুলাে সৃষ্টিছাড়া সে-কথা বলা বাহুল্য। শুধু যে বিদেশী তা নয়, বলা চলে যে তারা কোনােদেশীই নয়। কিন্তু লােকের ঠেলাঠেলি ভিড়। অল্প কয়দিনে পাঁচ হাজার লোক ছবি দেখেছে। আর যে যা বলুক, অন্তত আমি তাে এদের রুচির প্রশংসা না করে থাকতে পারব না।

 রুচির কথা ছেড়ে দাও, মনে করা যাক এ একটা ফাঁকা কৌতূহল। কিন্তু কৌতূহল থাকাটাই যে জাগ্রত চিত্তের পরিচয়। মনে আছে একদা আমাদের ইঁদারার জন্যে আমেরিকা থেকে একটা বায়ুচল চক্রযন্ত্র এনেছিলুম, তাতে কুয়াের গভীর তলা থেকে জল উঠেছিল। কিন্তু যখন দেখলুম ছেলেদের চিত্তের গভীর তলদেশ থেকে একটুও কৌতূহল টেনে তুলতে পারলে না তখন মনে বড়ােই ধিক্কার লাগল। এই তাে আমাদের ওখানে আছে বৈদ্যুত আলাের কারখানা, কজন ছেলের তাতে একটুও ঔৎসুক্য আছে। অথচ এরা তাে ভদ্রশ্রেণীর ছেলে। বুদ্ধির জড়তা যেখানে, সেইখানে কৌতূহল দুর্বল।

৪৫