বোম্ শব্দে আকাশ বিদীর্ণ হইয়া গেল। মগসৈন্যগণ আশ্চর্য হইয়া পরস্পরের মুখে চাহিতে লাগিল।
নবম পরিচ্ছেদ
রাজধর যখন জয়োপহার লইয়া আসিলেন তখন তাঁহার মুখে এত হাসি যে, তাঁহার ছোটো চোখ দুটো বিন্দুর মতো হইয়া পিট্ পিট্ করিতে লাগিল। হাতির দাঁতের মকুট বাহির করিয়া ইন্দ্রকুমারকে দেখাইয়া কহিলেন, “এই দেখো, যুদ্ধের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এই পুরস্কার পাইয়াছি।”
ইন্দ্রকুমার ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, “যুদ্ধ! যুদ্ধ তুমি কোথায় করিলে! এ পুরস্কার তোমার নহে। এ মুকুট যুবরাজ পরিবেন।”
রাজধর কহিলেন, “আমি জয় করিয়া আনিয়াছি; এ মকুট আমি পরিব।”
যুবরাজ কহিলেন, “রাজধর ঠিক কথা বলিতেছেন, এ মকুট রাজধরেরই প্রাপ্য।”
ইশা খাঁ চটিয়া রাজধরকে বলিলেন, “তুমি মকুট পরিয়া দেশে যাইবে! তুমি সৈন্যাধ্যক্ষের আদেশ লঙ্ঘন করিয়া যুদ্ধ হইতে পলাইলে, এ কলঙ্ক একটা মুকুটে ঢাকা পড়িবে না। তুমি একটা ভাঙা হাঁড়ির কানা পরিয়া দেশে যাও, তোমাকে সাজিবে ভালো।”
রাজধর বলিলেন, “খাঁ-সাহেব, এখন তো তোমার মুখে খুব বোল ফুটিতেছে, কিন্তু আমি না থাকিলে তোমরা এতক্ষণে থাকিতে কোথায়।”
ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “যেখানেই থাকি, যুদ্ধ ছাড়িয়া গর্তের মধ্যে লুকাইয়া থাকিতাম না।”
যুবরাজ বলিলেন, “ইন্দ্রকুমার, তুমি অন্যায় বলিতেছ। সত্য কথা বলিতে কী রাজধর না থাকিলে আজ আমাদের বিপদ হইত।”
ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “রাজধর না থাকিলে আজ আমাদের কোনো বিপদ হইত না। রাজধর না থাকিলে এ মকুট আমি যুদ্ধ করিয়া আনিতাম—রাজধর চুরি করিয়া আনিয়াছে। দাদা, এ মকুট আনিয়া আমি তোমাকে পরাইয়া দিতাম, নিজে পরিতাম না।”
যুবরাজ মুকুট হাতে লইয়া রাজধরকে বলিলেন, “ভাই, তুমিই আজ জিতিয়াছ। তুমি না থাকিলে অল্প সৈন্য লইয়া আমাদের কী বিপদ হইত জানি না। এ মকুট আমি তোমাকে পরাইয়া দিতেছি।”
বলিয়া রাজধরের মাথায় মুকুট পরাইয়া দিলেন।
ইন্দ্রকুমারের বক্ষ যেন বিদীর্ণ হইয়া গেল— তিনি রুদ্ধকণ্ঠে বলিলেন, “দাদা, রাজধর শৃগালের মতো গোপনে রাত্রিযোগে চুরি করিয়া এই রাজমুকুট পুরস্কার পাইল; আর আমি যে প্রাণপণে যুদ্ধ করিলাম—তোমার মুখে হইতে একটা প্রশংসার বাক্যও শুনিতে পাইলাম না! তুমি কিনা বলিলে, রাজধর না থাকিলে কেহ তোমাকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিতে পারিত না। কেন দাদা, আমি কি সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার চোখের সামনে যুদ্ধ করি নাই— আমি কি যুদ্ধ ছাড়িয়া পলাইয়া