পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ল্যাবরেটরি
৮৪৯

দাগী রকমের জনশ্রুতি শুনেছিল মনে মনে তার প্রতিবাদ করলে। হরিদাসবাবু যখন বললে ‘রেবতীবাবুর নামের কবচ রক্ষাকবচরূপে এ সভার গলায় আজ ঝোলানো হল, এর থেকে বোঝা যাবে এ সভার উদ্দেশ্য কত মহোচ্চ’, তখন রেবতী নিজের নামের গৌরব ও দায়িত্ব খুব প্রবলরূপে অনুভব করলে। ওর মন থেকে সংকোচের খোলসটা খসে পড়ে গেল। মেয়েরা মুখের থেকে সিগারেট নামিয়ে ঝুঁকে পড়ল ওর চৌকির উপর, মধুর হাস্যে বললে, “বিরক্ত করছি আপনাকে, কিন্তু একটা অটোগ্রাফ দিতেই হবে।”

 রেবতীর মনে হল— এতদিন সে যেন একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিল, স্বপ্নের গুটি গেছে খুলে, প্রজাপতি বেরিয়ে পড়েছে।

 একে একে লোক বিদায় হল। নীলা রেবতীর হাত চেপে ধরে বললে, “আপনি কিন্তু যাবেন না।”

 জ্বালাময় মদ ঢেলে দিলে ওর শিরার মধ্যে।

 দিনের আলো শেষ হয়ে আসছে, লতাবিতানের মধ্যে সবুজ প্রদোষের অন্ধকার।

 বেঞ্চির উপরে দুজনে কাছাকাছি বসল। নিজের হাতের উপরে রেবতীর হাত তুলে নিয়ে নীলা বললে, “ডক্টর ভট্টাচার্য, আপনি পুরুষমানুষ হয়ে মেয়েদের অত ভয় করেন কেন।”

 রেবতী স্পর্ধাভরে বললে, “ভয় করি? কখনও না।”

 “আমার মাকে আপনি ভয় করেন না?”

 “ভয় কেন করব, শ্রদ্ধা করি।”

 “আমাকে?”

 “নিশ্চয় ভয় করি।”

 “সেটা ভালো খবর। মা বলেছেন, কিছুতে আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে দেবেন না। তা হলে আমি আত্মহত্যা করব।”

 “কোনো বাধা আমি মান্‌ব না, আমাদের বিয়ে হবেই হবে।”

 কাঁধের উপর মাথা রেখে নীলা বললে, “তুমি হয়তো জান না তোমাকে কতখানি চাই।”

 নীলার মাথাটা আরও বুকের কাছে টেনে নিয়ে রেবতী বললে, “তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে এমন কোনো শক্তি নেই।”

 “জাত?”

 “ভাসিয়ে দেব জাত।”

 “তা হলে রেজিস্ট্রারের কাছে কালই নোটিস দিতে হবে।”

 “কালই দেব, নিশ্চয় দেব।”

 রেবতী পুরুষের তেজ দেখাতে শুরু করেছে।

 পরিণামটা দ্রুতবেগে ঘনিয়ে আসতে লাগল।


আইমার পক্ষাঘাতের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মৃত্যুর আশঙ্কা আসন্ন। যে পর্যন্ত মৃত্যু না হয় সোহিনীকে তিনি কিছুতে ছাড়বেন না। এই সুযোগটাকে দু হাত দিয়ে আঁকড়িয়ে ধরে নীলার উন্মত্ত যৌবন আলোড়িত হয়ে উঠেছে।