পাতা:শোধবোধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অঙ্ক
শােধ-বােধ
দ্বিতীয় দৃশ্য

ছেলেটিকে তুমি সাহেব করো বা নবাব করো, তার খরচ আমি জোগাবো না। আমার মৃত্যুর পরে সে যা পাবে, তাতে তার সখের খরচ চ’ল্‌বে না।

 বিধু। সে আমি জানি। তোমার টাকার উপরে ভরসা রাখলে ছেলেকে কপ্নি পরানো অভ্যাস করাতেম।

 মন্মথ। আমিও তা জানি! তোমাবি ভগিনীপতি শশধরের পরেই তোমার ভরসা। তার সন্তান নেই বলে’ ঠিক করে’ বসে’ আছ, তোমার ছেলেকেই সে উইলে সমস্ত লিখে পড়ে, দিয়ে যাবে। সেই জন্যই যখন তখন ছেলেটাকে ফিরিঙ্গি সাজিয়ে এক গা গন্ধ মাখিয়ে তার মেসোর আদর কাড়্‌বার জন্য পাঠিয়ে দাও। আমি দারিদ্র্যের লজ্জা অনায়াসেই সহ্য ক’র্‌তে পারি, কিন্তু ধনী কুটুম্বের সোহাগ যাচনার লজ্জা আমার সহ্য হয় না।

 বিধু। ছেলেকে মাসির কাছে পাঠালেও গায়ে সয় না, এত বড়ো মানী লোকের ঘরে আছি, সে তো পূর্ব্বে বুঝতে পারি নি।

বিধবা জার ঘরে প্রবেশ

 জা। ভাব্‌লুম, এতক্ষণে কথা ফুরিয়ে গেছে, এইবাব ঘরে এসে পানগুলো সেজে রাখি। কিন্তু এখনো ফুরোলো না। মেজবৌ, তোদের ধন্য! আজ সে তোর ন’ বছর বয়স থেকে শুরু হ’য়েচে, তবু তোদের কথা যে আর ফুরোলো না! রাত্রে কুলোয় না, শেষকালে দিনেও দুইজনে মিলে ফিস্ ফিস্। তোদের জিবের আগায় বিধাতা এত মধু দিন-রাত্রি জোগান্ কোথা থেকে, আমি তাই ভাবি। রাগ কোরো না ঠাকুরপো, তোমাদের মধুরালাপে ব্যাঘাত ক’র্‌বো না।

২৪]