পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৮১

এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত্য ছেয়ে।
সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে
গভীর ক্রন্দন “যেতে নাহি দিব।” হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
চলিতেছে এমনি অনাদিকাল হতে;
প্রলয় সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে
প্রসারিত ব্যগ্রবাহু জ্বলন্ত আঁখিতে
“দিব না দিব না যেতে” ডাকিতে ডাকিতে
হুহু ক’রে তীব্রবেগে চলে যায় সবে
পূর্ণ করি’ বিশ্বতট আর্ত কলরবে।
সম্মুখ ঊমিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেউ
"দিব না দিব না যেতে”—নাহি শুনে কেউ
নাহি কোনো সাড়া।
চারিদিক হতে আজি
অবিশ্রাম কর্ণে মোর উঠিতেছে বাজি’,
সেই বিশ্বমর্মভেদী করুণ ক্রন্দন
মোর কথাকণ্ঠস্বরে। শিশুর মতন
বিশ্বের অবোধ বাণী।  চিরকাল ধ’রে
যাহা পার তাই সে হারায়, তবু তো রে
শিথিল হোলো না মুষ্টি, তবু অধিরত
সেই চারি বৎসরের কন্যাটির মতো
অক্ষুণ্ণ প্রেমের গর্বে কহিছে সে ডাকি’
“যেতে নাহি দিব।” ম্লানমুখ, অশ্রু-আঁখি,
দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে টুটিছে গরব
তবু প্রেম কিছুতে না মানে পরাভব,—
তবু বিদ্রোহের ভাবে রুদ্ধ কণ্ঠে কয়
“যেতে নাহি দিব।” যতবার পরাজয়