পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
চয়নিকা

দুরন্ত আশা

মর্মে যবে মত্ত আশা সর্প-সম ফোঁসে
অদৃষ্টের বন্ধনেতে দাপিয়া বৃথা রোষে,
তখনো ভালোমানুষ সেজে, বাধানো হুঁকা যতনে মেজে,
মলিন তাস সজোরে ভেঁজে খেলিতে হবে ক’ষে।
অন্নপায়ী বঙ্গবাসী স্তন্যপায়ী জীব,
জন-দশেকে জটলা করি তক্তপোষে ব’সে।

ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।
দেখা হোলেই মিষ্ট অতি, মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্ট গতি, গৃহের প্রতি টান,
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রারসে ভরা,
মাথায় ছোটো বহরে বড়ো বাঙালি-সন্তান।

ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন।
চরণ-তলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন,—
ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি, জীবন স্রোত আকাশে ঢালি’
হৃদয়-তলে বহ্নি জ্বালি’ চলেছি নিশিদিন;
বরশা হাতে ভরসা প্রাণে সদাই নিরুদ্দেশ,—
মরুর ঝড় যেমন বহে সকল বাধাহীন।

বিপদ মাঝে ঝাঁপায়ে প’ড়ে শোণিত উঠে ফুটে,
সকল দেহে সকল মনে জীবন জেগে উঠে।