পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৫৫

অন্তর্গূঢ় বাষ্পাকুল বিচ্ছেদ-ক্রন্দন
এক দিনে। ছিন্ন করি’ কালের বন্ধন
সেই দিন ঝরে পড়েছিল অবিরল
চিরদিবসের যেন রুদ্ধ অশ্রুজল
আর্দ্র করি’ তোমার উদার শ্লোকরাশি।

সে-দিন কি জগতের যতেক প্রবাসী
জোড়হস্তে মেঘপানে শূন্যে তুলি মাথা
গেয়েছিল সমস্বরে বিরহের গাথা
ফিরি’ প্রিয়-গৃহপানে। বন্ধন-বিহীন
নবমেঘ-পক্ষ-’পরে করিয়া আসীন
পাঠাতে চাহিয়াছিল প্রেমের বারতা
অশ্রুবাষ্পভরা,—দূর বাতায়নে যথা
বিরহিণী ছিল শুয়ে ভূতল-শয়নে
মুক্তকেশে, ম্লানবেশে, সজল নয়নে?

তাঁদের সবার গান তোমার সংগীতে
পাঠায়ে কি দিলে, কবি, দিবসে নিশীথে
দেশে দেশান্তরে, খুঁজি’ বিরহিণী প্রিয়া।
শ্রাবণে জাহ্নবী যথা যায় প্রবাহিয়া
টানি লয়ে দিশ দিশান্তের বারিধারা
মহাসমুদ্রের মাঝে হোতে দিশাহারা।
পাষাণ-শৃঙ্খলে যথা বন্দী হিমাচল
আষাঢ়ে অনন্ত শূন্যে হেরি’ মেঘদল
স্বাধীন গগন-চারী, কাতরে নিশ্বাসি’
সহস্র কন্দর হতে বাষ্প রাশি রাশি
পাঠায় গগন পানে; ধায় তা’রা ছুটি’
উধাও কামনা সম; শিখরেতে উঠি’