পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

২৭২

সাহিত্যপরিষৎ

বাংলাদেশের স্থানে স্থানে সাহিত্যপরিষদের শাখাস্থাপন ও বৎসরে বৎসরে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় পরিষদের বাৎসরিক মিলনোৎসব-সাধনের প্রস্তাব অন্তত দুইবার আমার মুখ দিয়া প্রচার হইয়াছে। তাহাতে কী উপকারের আশা করা যায় এবং তাহার কার্যপ্রণালী কিরূপ হওয়া উচিত তাহাও সাধ্যমত আলোচনা করিয়াছি। অতএব তৃতীয়বারে আমাকে বিশ্রাম করিতে দেওয়া উচিত ছিল। একই জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করিতে গেলে ফলন ভালো হয় না, নিঃসন্দেহই আমার সুহৃদ্‌গণ সে কথা জানেন; কিন্তু তাঁহারা যে ফলের প্রতি দৃষ্টি না করিয়াও আমাকে সভাস্থলে পুনশ্চ আকর্ষণ করিলেন এর কারণ তো আর কিছু বুঝি না, এ কেবল আমার প্রতি পক্ষপাত। এই অকারণ পক্ষপাত ব্যাপারটার অপব্যয় অন্যের সম্বন্ধে সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে সেটা তেমন অত্যুগ্র অন্যায় বলিয়া ঠেকে না—মনুষ্যস্বভাবের এই আশ্চর্যধর্মবশত আমি বন্ধুদের আহ্বান অমান্য করিতে পারিলাম না। ইহাতে যদি আমার অপরাধ হয় ও আমাকে অপবাদ সহ্য করিতে হয় তাহাও স্বীকার করিতে হইবে।

 পূর্বে আমাদের দেশে পাল-পার্বণ অনেক রকমের ছিল; তাহাতে আমদের একঘেয়ে একটানা জীবনের মাঝে মাঝে নাড়া দিয়া ঢেউ তুলিয়া দিত। আজকাল সময়াভাবে অন্নাভাবে ও শ্রদ্ধার অভাবে সে-সকল পার্বণ কমিয়া আসিয়াছে। এখন সভা-সমিতি-সম্মিলন সেই-সকল পার্বণের জায়গা দখল করিতেছে। এইজন্য শহরে-মফস্বলে কতরকম উপলক্ষে কতপ্রকার নাম ধরিয়া কত সভাস্থাপন হইতেছে সেই-সকল সভায় দেশের বক্তাদের বক্তৃতার পালা জমাইবার জন্য কত চেষ্টা ও কত আয়োজন হইয়া থাকে তাহা সকলেই জানেন।

 অনেকে এই-সকল চেষ্টাকে নিন্দা করেন ও এই-সকল আয়োজনকে হুজুগ বলিয়া উড়াইয়া দিয়া থাকেন। বাংলাভাষায় এই হুজুগ শব্দটা