পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
১০৫

যেখানে যা-কিছু আছে; নদীস্রোতনীরে
আপনারে গলাইয়া দুই তীরে তীরে
নব নব লোকালয়ে ক’রে ঘাই দান
পিপাসার জল, গেয়ে যাই কলগান
দিবস নিশীথে; পৃথিবীর মাঝখানে
উদয়-সমুদ্র হতে অস্ত-সিন্ধুপানে
প্রসারিয়া আপনার তুঙ্গগিরিরাজি
আপনার সুদুর্গম রহস্যে বিরাজি;
কঠিন পাষাণক্রোড়ে তীব্র হিমবায়ে
মানুষ করিয়া তুলি লুকায়ে লুকায়ে
নব নব জাতি। ইচ্ছা করে মনে মনে
স্বজাতি হইয়া থাকি সর্বলোকসনে
দেশ দেশান্তরে; উষ্ট্র দুগ্ধ করি পান
মরুতে মানুষ হই আরব সন্তান
দুর্দম স্বাধীন, তিব্বতের গিরিতটে
নির্লিপ্ত প্রস্তরপুরীমাঝে, বৌদ্ধমঠে
করি বিচরণ। দ্রাক্ষাপায়ী পারসীক
গোলাপকাননবাসী, তাতার নির্ভীক
অশ্বারূঢ়, শিষ্টাচারী সতেজ জাপান,
প্রবীণ প্রাচীন চীন নিশিদিনমান
কর্ম অনুরত,—সকলের ঘরে ঘরে
জন্মলাভ ক’রে লই হেন ইচ্ছা করে।
অরুগ্ন বলিষ্ঠ হিংস্র নগ্ন বর্বরতা—
নাহি কোনো ধর্মাধর্ম, নাহি কোনো প্রথা,
নাহি কোনো বাধাবন্ধ,—নাহি চিন্তাজ্বর
নাহি কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব, নাহি ঘর-পর,
উন্মুক্ত জীবন-স্রোত বহে দিনরাত
সন্মুখে আঘাত করি’, সহিয়া আঘাত