পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
১৮১

কোনো চিহ্ন নাহি কারো। আজ মনে হয়
ছিলে তুমি চিরদিন চিরানন্দময়
অলকার অধিবাসী। সন্ধ্যাভ্রশিখরে
ধ্যান ভাঙি’ উমাপতি ভূমানন্দ-ভরে
নৃত্য করিতেন যবে, জলদ সজল
গঞ্জিত মৃদঙ্গরবে, তড়িৎ চপল
ছন্দে ছন্দে দিত তাল, তুমি সেই ক্ষণে
গাহিতে বন্দনা-গান, —গীতসমাপনে
কর্ণ হতে বর্হ খুলি’ স্নেহহাস্যভরে
পরায়ে দিতেন গৌরী তব চূড়া-’পরে॥

১১ শ্রাবণ, ১৩০৩
—চৈতালি

কুমারসম্ভব গান

যখন শুনালে কবি, দেবদম্পতীরে
কুমারসম্ভবগান,—চারিদিকে ঘিরে’
দাঁড়াল প্রমথগণ,—শিখরের ’পর
নামিল মন্থর শান্ত সন্ধ্যা-মেঘস্তর,—
স্থগিত বিদ্যুৎলীলা, গর্জন বিরত,
কুমারের শিল্পী করি’ পুচ্ছ অবনত
স্থির হয়ে দাঁড়াইল পার্বতীর পাশে
বাঁকায়ে উন্নত গ্রীবা। কভু স্মিতহাসে
কাঁপিল দেবীর ওষ্ঠ,—কভু দীর্ঘশ্বাস
অলক্ষ্যে বহিল,—কভু অশ্রুজলোচ্ছ্বাস
দেখা দিল আঁখিপ্রান্তে—যবে অবশেষে
ব্যাকুল শরমখানি নয়ন-নিমেষে
নামিল নীরবে,—কবি, চাহি’ দেবীপানে
সহসা থামিলে তুমি অসমাপ্তগানে।৷

১৫ শ্রাবণ, ১৩০৩
—চৈতালি