পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
২৭৫

ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি যখন বাঁশের বনে পড়ে
কথা শুনতে ভালোবাসি ব’সে কোণের ঘরে।
ঐ দেখো মা জানলা দিয়ে আসে জলের ছাঁট,
বল্ গো আমায় কোথায় আছে তেপান্তরের মাঠ।৷

কোন্ সাগরের তীরে মাগো কোন্ পাহাড়ের পারে,
কোন্ রাজাদের দেশে মাগো কোন্ নদীটির ধারে।
কোনোখানে আল বাঁধা তার নাই ডাহিনে বাঁয়ে?
পথ দিয়ে তার সন্ধ্যাবেলা পৌঁছে না কেউ গাঁয়ে?
সারাদিন কি ধু ধু করে শুক‍্নো ঘাসের জমি।
একটি গাছে থাকে শুধু ব্যাঙ্গমা-বেঙ্গমি?
সেখান দিয়ে কাঠকুড়ানি যায় না নিয়ে কাঠ?
বল্ গো আমায় কোথায় আছে তেপান্তরের মাঠ।৷


এমনিতরো মেঘ করেছে সারা আকাশ ব্যেপে;
রাজপুত্তুর যাচ্ছে মাঠে একলা ঘোড়ায় চেপে।
গজমতির মালাটি তার বুকের ’পরে নাচে,
রাজকন্যা কোথায় আছে খোঁজ পেলে কার কাছে।
মেঘে যখন ঝিলিক মারে আকাশের এক কোণে।
দুয়োরানী-মায়ের কথা পড়ে না তার মনে?
দুখিনী মা গোয়াল ঘরে দিচ্ছে এখন ঝাঁট,
রাজপুত্তুর চলে-যে কোন্ তেপান্তরের মাঠ।

ঐ দেখো মা গাঁয়ের পথে লোক নেইকো মোটে;
রাখাল-ছেলে সকাল ক’রে ফিরেছে আজ গোঠে।
আজকে দেখো রাত হোলো-যে দিন না যেতে যেতে,
কৃষাণেরা বসে আছে দাওয়ায় মাদুয় পেতে।