পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শাস্তি।
৪১

মারিয়াছে, তাহা হইলে কি সে রক্ষা পাইবে? আমি কহিলাম, খবরদার হারামজাদা, আদালতে এক বর্ণ মিথ্যা বলিস্ না—এতবড় মহাপাপ আর নাই—ইত্যাদি।

 রামলোচন প্রথমে চন্দরাকে রক্ষা করিবার উদ্দেশে অনেকগুলা গল্প বানাইয়া তুলিয়াছিল, কিন্তু যখন দেখিল চন্দরা নিজে বাঁকিয়া দাঁড়াইয়াছে, তখন ভাবিল, ওরে বাপরে, শেষকালে কি মিথ্যা-সাক্ষীর দায়ে পড়িব! যেটুকু জানি সেইটুকু বলা ভাল। এই মনে করিয়া রামলোচন যাহা জানে তাহাই বলিল। বরঞ্চ তাহার চেয়েও কিছু বেশি বলিতে ছাড়িল না।

 ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট সেশনে চালান দিলেন।

 ইতিমধ্যে চাষবাস হাটবাজার হাসিকান্না পৃথিবীর সমস্ত কাজ চলিতে লাগিল। এবং পূর্ব্ব পূর্ব্ব বৎসরের মত নবীন ধান্যক্ষেত্রে শ্রাবণের অবিরল বৃষ্টিধারা বর্ষিত হইতে লাগিল।

 পুলিস আসামী এবং সাক্ষী লইয়া আদালতে হাজির। সম্মুখবর্ত্তী মুন্সেফের কোর্টে বিস্তর লোক নিজ নিজ মকদ্দামার অপেক্ষায় বসিয়া আছে। রন্ধনশালার পশ্চাদ্বর্ত্তী একটি ডোবার অংশ বিভাগ লইয়া কলিকাতা হইতে এক উকীল আসিয়াছে এবং তদুপলক্ষে বাদীর পক্ষে উনচল্লিশ জন সাক্ষী উপস্থিত আছে। কতশত লোক আপন আপন কড়াগণ্ডা হিসাবের চুলচেরা মীমাংসা করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া আসিয়াছে, জগতে আপাততঃ তদপেক্ষা গুরুতর আর কিছুই