পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দামিনী
৮৫

“প্রভু, আমার একটা কথা শােনো।”

 শচীশ চুপ করিয়া তার মুখের দিকে চাহিল। দামিনী কহিল, “আমাকে বুঝাইয়া দাও, তােমরা দিনরাত যা লইয়া আছ তাহাতে পৃথিবীর কী প্রয়ােজন। তােমরা কাকে বাঁচাইতে পারিলে।”

 আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইলাম। দামিনী কহিল, “তােমরা দিনরাত ‘রস রস’ করিতেছ, ও ছাড়া আর কথা নাই। রস যে কী সে তাে আজ দেখিলে? তার না আছে ধর্ম, না আছে কর্ম, না আছে ভাই, না আছে স্ত্রী, না আছে কুলমান! তার দয়া নাই, বিশ্বাস নাই, লজ্জা নাই, শরম নাই! এই নির্লজ্জ নিষ্ঠুর সর্বনেশে রসের রসাতল হইতে মানুষকে রক্ষা করিবার কী উপায় তােমরা করিয়াছ।”

 আমি থাকিতে পারিলাম না, বলিয়া উঠিলাম, “আমরা স্ত্রীলােককে আমাদের চতুঃসীমানা হইতে দূরে খেদাইয়া রাখিয়া নিরাপদে রসের চর্চা করিবার ফন্দি করিয়াছি।”

 আমার কথায় একেবারেই কান না দিয়া দামিনী শচীশকে কহিল, “আমি তােমার গুরুর কাছ হইতে কিছুই পাই নাই। তিনি আমার উতলা মনকে এক মুহূর্ত শান্ত করিতে পারেন নাই। আগুন দিয়া আগুন নেবানাে যায় না। তােমার গুরু যে পথে সবাইকে চালাইতেছেন সে পথে ধৈর্য নাই, বীর্য নাই, শান্তি নাই। ঐ-যে মেয়েটা মরিল রসের পথে রসের রাক্ষসীই তাে তার বুকের রক্ত খাইয়া তাকে মারিল। কী তার কুৎসিত