পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
চতুরঙ্গ

 দামিনী হাত জোড় করিয়া বলিল, “তুমি আমার গুরু। আমি যত পাপিষ্ঠা হই, আমাকে সেবা করিবার অধিকার দিয়ো!”

যাই বল, আমি শচীশের এই সাধনার ব্যাকুলতা বুঝিতে পারি। একদিন তো এই জিনিসটাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছি; এখন, আর যাই হোক, হাসি বন্ধ হইয়া গেছে। আলেয়ার আলো নয়, এ-যে আগুন। শচীশের মধ্যে ইহার দাহটা যখন দেখিলাম তখন ইহাকে লইয়া জ্যাঠামশায়ের চেলাগিরি করিতে আর সাহস হইল না। কোন্ ভূতের বিশ্বাসে ইহার আদি এবং কোন্ অদ্ভুতের বিশ্বাসে ইহার অন্ত, তাহা লইয়া হার্বর্ট্ স্পেন্সরের সঙ্গে মোকাবিলা করিয়া কী হইবে— স্পষ্ট দেখিতেছি, শচীশ জ্বলিতেছে, তার জীবনটা এক দিক হইতে আর-এক দিক পর্যন্ত রাঙা হইয়া উঠিল।

 এতদিন সে নাচিয়া গাহিয়া, কাঁদিয়া, গুরুর সেবা করিয়া, দিন রাত অস্থির ছিল— সে একরকম ছিল ভালো। মনের সমস্ত চেষ্টা প্রত্যেক মুহূর্তে ফুঁকিয়া দিয়া একেবারে সে নিজেকে দেউলে করিয়া দিত। এখন স্থির হইয়া বসিয়াছে, মনটাকে আর চাপিয়া রাখিবার জো নাই। আর ভাবসম্ভোগে তলাইয়া যাওয়া নয়, এখন উপলব্ধিতে প্রতিষ্ঠিত হইবার জন্য ভিতরে ভিতরে এমন লড়াই চলিতেছে যে তার মুখ দেখিলে ভয় হয়।