পাতা:পথ ও পথের প্রান্তে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথে ও পথের প্রান্তে । ৭৩ ৷ আমাদের জানার ভরপুর খোরাক মেলে ব’লেই তাতে আমরা এত আরাম পাই । কেন এই কথাটা এমন জোরে মনে এল সেই কথাটা খুলে বলি। আজ বিকেলে সিঙ্গাপুরের ঘাটে জাহাজ থামতেই সরযু জাহাজে এসে উপস্থিত। আমি তাকে গতবারে অল্প কয়দিনমাত্র দেখেছিলুম, সুতরাং তাকে সুপরিচিত বললে বেশি বলা হবে । কিন্তু তাকে দেখে মন খুশি হোলো এইজন্যে যে তিনি বাঙালি মেয়ে অর্থাৎ এক মুহুতে অনেকখানি জানা গেল—র্তার সরযু নাম বিয়াটাস বা এলিয়োনোরের মতো পরিচয়সূচক নয়, আমার পক্ষে তাতে তার চেয়ে অনেক বেশি পদার্থ আছে । তার পরে । র্তার শাড়ী, তার বালা, তার কপালের মাঝখানের কুস্কুমের বিন্দু, কেবলমাত্র দৃশ্বাগত নয়, তার পিছনে অনেকখানি অদৃশ্য সামগ্রী আছে এক নিমিষেই সেই সমস্ত এসে চোখ এবং মনকে ভরে ফেলে। ভালো করে ভেবে দেখো এই সমস্ত চিহ্ন, বচনীয় এবং অনির্বচনীয় কত বিচিত্র পদার্থকে সংক্ষেপে একই কালে বহন করে, তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করতে গেলে আঠারে। পর্ব বই ভরতি হয়ে যায়। এ জাহাজে অনেক মেয়ে আছে তাদের মধ্যে এই বাঙালি মেয়েকে দেখে মন এত খুশি হোলে! —তার কারণ আর কিছু নয়,জানতেই মনের আনন্দ, মন যখন বলে জানলুম তখন সে খুশি হয়, আমরা যাকে বলি মনকেমন করা তার মানে হচ্ছে চারিদিকের জানা পদার্থটা যথেষ্ট পুর্ণায়তন নয়। ইতি ১০ মার্চ, ১৯২৯ । *