পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
চতুরঙ্গ

হাত খাঁড়ার মতো আমার কপাল পর্যন্ত উঠিল, মাথা নিচু হইল না। আমরা জ্যাঠামশায়ের চেলা, আমাদের নমস্কার গুণহীন ধনুকের মতো নমো-অংশটা ত্যাগ করিয়া বিষম খাড়া হইয়া উঠিয়াছিল।

 স্বামীজি সেটা লক্ষ করিলেন এবং শচীশকে বলিলেন, “তামাকটা সাজিয়া দাও তো হে শচীশ।”

 শচীশ তামাক সাজিতে বসিল। তার টিকা যেমন ধরিতে লাগিল আমিও তেমনি জ্বালিতে লাগিলাম। কোথায় যে বসি ভাবিয়া পাইলাম না। আসবাবের মধ্যে এক তক্তপোশ, তার উপরে স্বামীজির বিছানা পাতা। সেই বিছানার এক পাশে বসাটা অসংগত মনে করি না, কিন্তু কী জানি, সে ঘটিয়া উঠিল—দরজার কাছে দাঁড়াইয়া রহিলাম।

 দেখিলাম, স্বামীজি জানেন আমি রায়চাঁদ-প্রেমচাঁদের বৃত্তিওয়ালা। বলিলেন, “বাবা, ডুবুরি মুক্তা তুলিতে সমুদ্রের তলায় গিয়া পৌছায় কিন্তু সেখানেই যদি টিঁকিয়া যায় তবে রক্ষা নাই— মুক্তির জন্য তাকে উপরে উঠিয়া হাঁফ ছাড়িতে হয়। বাঁচিতে চাও যদি, বাপু, তবে এবার বিদ্যাসমূদ্রের তলা হইতে ভাঙার উপরে উঠিতে হইবে। প্রেমচঁদ-রায়চাঁদের বৃত্তিটা তো পাইয়াছ, এবার প্রেমাচাঁদ-রায়চাঁদের নিবৃত্তিটা একবার দেখো।”

 শচীশ তামাক সাজিয়া তাঁর হাতে দিয়া তাঁর পায়ের দিকে মাটির উপরে বসিল। স্বামী তখনই শচীশের দিকে তাঁর পা ছড়াইয়া দিলেন। শচীশ ধীরে ধীরে তাঁর পায়ে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিল।