পাতা:পথ ও পথের প্রান্তে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথে ও পথের প্রান্তে o মনে প্রিয়নামের আসন পেয়েছে, কপোতাক্ষী, ময়ূরাক্ষী, ইচ্ছামতী—তাদের সঙ্গে আমাদের প্রাত্যহিক ব্যবহারের সম্বন্ধ। পূজার ফুল ছাড়া আর কোনো ফুলের সঙ্গে আমাদের অবশ্য প্রয়োজনের সম্বন্ধ নেই। ফ্যাশানের সম্বন্ধ আছে। অচিরায়ু সীজন ফ্রাউয়ারের সঙ্গে – মালীর হাতে তাদের শুশ্রষার ভার—ফুলদানিতে যথারীতি তাদের গতায়াত । একেই বলে তামসিকতা, অর্থাৎ মেটরিয়ালিজ ম—স্কুল প্রয়োজনের বাইরে চিত্তের অসাড়তা । এই নামহীন ফুলের দেশে কবির কী তুর্দশা ভেবে দেখো, ফুলের রাজ্যে নিতান্ত সংকীর্ণ তার লেখনীর সঞ্চরণ। পাখি সম্বন্ধেও ঐ কথা, কাক কোকিল পাপিয়া বেী-কথা-কওকে অস্বীকার করবার উপায় নেই – কিন্তু কত সুন্দর পাখি আছে যার নাম অন্তত সাধারণে জানে না। ঐ প্রকৃতিগত ঔদাসীন্য আমাদের সকল পরাভবের মূলে—দেশের লোকের সম্বন্ধে আমাদের ঔদাসীন্যও এই স্বভাববশতই প্রবল। পরীক্ষা পাসের জন্যে ইতিহাস পাঠে উপেক্ষা করবার জো নেই—অামাদের স্বাদেশিকতা সেই পুথির বুলি দিয়ে তৈরি, দেশের লোকের পরে অনুরাগের ঔৎসুক্য দিয়ে নয় । আমাদের জগৎটা কত ছোটো ভেবে দেখো—তার থেকে কত জিনিসই বাদ পড়েছে। ইতি ১৬ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ ।