পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



গল্পসল্প

 দাদামশায়, তুমি একটু স্পষ্ট ক’রে তাঁর কথা বলো-না, তোমার অর্ধেক কথা আমি বুঝতে পারি নে।

 ক্রমে ক্রমে বলছি, একটু ধৈর্য ধরে।—

 আমাদের বাড়িতে ছিলেন মুনশী, দাদাকে ফারসি পড়াতেন। কাঠামোট তাঁর বানিয়ে তুলতে মাংসের পড়েছিল টানাটানি। হাড় ক’খানার উপরে একটা চামড় ছিল লেগে, যেন মোমজামার মতো। দেখে কেউ আন্দাজ করতে পারত না তাঁর ক্ষমতা কত। না পারবার হেতু এই যে, ক্ষমতার কথাটা জানতেন কেবল তিনি নিজে। পৃথিবীতে বড়ো বড়ো সব পালোয়ান কখনো জেতে কখনো হারে। কিন্তু, যে তালিম নিয়ে মুনশীর ছিল গুমর তাতে তিনি কখনো কারো কাছে হটেন নি। তাঁর বিদ্যেতে কারো কাছে তিনি যে ছিলেন কমতি সেটার নজির বাইরে থাকতে পারে, ছিল না তাঁর মনে। যদি হত ফারসি-পড়া বিদ্যে তা হলে কথাটা সহজে মেনে নিতে রাজী ছিল লোকে। কিন্তু, ফারসির কথা পাড়লেই বলতেন, আরে ও কি একটা বিদ্যে। কিন্তু, তাঁর বিশ্বাস ছিল আপনার গানে। অথচ তাঁর গলায় যে আওয়াজ বেরোত সেটা চেঁচানি কিংবা কাঁদুনির জাতের, পাড়ার লোকে ছুটে আসত বাড়িতে কিছু বিপদ ঘটেছে মনে ক’রে। আমাদের বাড়িতে নামজাদ গাইয়ে ছিলেন বিষ্ণু, তিনি কপাল চাপ্ড়িয়ে বলতেন, মুনশীজি আমার রুটি মারলেন দেখছি। বিষ্ণুর এই হতাশ ভাবখানা দেখে মুনশী বিশেষ দুঃখিত হতেন না— একটু মুচকে হাসতেন মাত্র। সবাই বলত, মুনশীজি, কী গলা-ই ভগবান আপনাকে দিয়েছেন। খোশনামটা মুনশী নিজের পাওনা বলেই টেঁকে গুঁজতেন। এই তো গেল গান।

 আরো একটা বিদ্যে মুনশীর দখলে ছিল। তারও সমজদার পাওয়া যেত না। ইংরেজি ভাষায় কোনো হাড়পাকা ইংরেজও তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারে না,

৪৪