পাতা:চিঠিপত্র (ঊনবিংশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাষায় কুৎসিত ভাবে তাদের প্রতি অসম্মান করেননি— করতে পারলে আনন্দ পেতেন না তাও নয় কিন্তু সাহস করেন নি– কারণ তারা জানেন দেশের লোক তা সহ্য করবে না। আমার সম্বন্ধে সে রকম সঙ্কোচের লেশমাত্র কারণ নেই– অনেকেই আমার নিন্দায় গ্রীত হন এবং বাকি অধিকাংশই সম্পূর্ণ উদাসীন। আমার প্রকাশ্য অপমানে দেশের লোকের চিত্তে বেদনা লাগে না, সুতরাং আমার প্রতি যারা কুৎসা প্রয়োগ করেন তাদের ক্ষতি বিপদ বা তিরস্কারের আশঙ্কা নেই। এক হিসাবে তারা সমস্ত দেশের প্রতিনিধি-স্বরূপেই এ কাজ করে থাকেন। সুতরাং তারা উপলক্ষ্য মাত্র। যারা আমার অন্ধ স্তাবক বলে কল্পিত, যারা আমার সুহৃদ বলে গণ্য তারা আমার এই অবমাননার কোনো প্রকাশ্য প্রতিকার করে থাকেন তারও কোনো প্রমাণ নেই। বুঝতে পারি প্রকাশ্যে অপমান করতে অপর পক্ষের যত সাহস ও নৈপুণ্য এ পক্ষের তা নেই, তার প্রধান কারণ তারা মনে মনে জানেন দেশের লোকের সহযোগিতার বল তাদের দিকে নয়। দেশের লোকের কাছে যে কোনো কারণে যারা শ্রদ্ধাভাজন তাদের ভাগ্যে এরকম গ্রানি কোনো দেশে কখনোই ঘটে না— রাস্তার চৌমাথার মধ্যে এমন নির্যাতন নিঃসহায়ভাবে তাদের কখনোই ভোগ করতে হয় না। তাই বলচি এই ব্যাপারের মূল সত্যটাকে আমার জেনে নেওয়া এবং মেনে নেওয়া দরকার— আর তার পরে চিত্তকে অবিচলিত রাখা আরো দরকার। সত্তরের কাছে এসে পৌছেচি —আমার আয়ু শেষ হয়ে এসেচে, এখন মনের সমস্ত শক্তি নিয়ে এই কামনা করচি যে এই হতভাগ্য আমি নামক বাহিরের পদার্থটার সমস্ত বোঝা এবং লাঞ্ছনা থেকে ভিতরের আমি সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যেন ইহলোক থেকে বিদায় নিতে পারে। এই উপলক্ষ্যে সংক্ষেপে আর একটা কথা বলে রাখি। প্রকাশ করাই আমার স্বধর্ম— প্রকাশের প্রেরণাকে অবরুদ্ধ করা আমার পক্ষে ४