পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬০
ভারতবর্ষ

বৈজ্ঞানিক সফলতার মহত্ত্ব আমরা স্বীকার করি; কিন্তু স্বীকার করিয়াও, তোমাদের যে সভ্যতা হইতে বড়ে বড়ো সহরে এমন রূঢ় আচার, এমন অবনত ধর্ম্মনীতি এবং বাহ্যশোভনতার এমন বিকার উৎপন্ন হইয়াছে, সে সভ্যতাকে আমরা সমস্ত মন দিয়া প্রশংসা করা অসম্ভব দেখি। তোমরা যাহাকে উন্নতিশীল জাত বল আমরা তাহা নই এ কথা মানিতে রাজি আছি— কিন্তু ইহাও দেখিতেছি, উন্নতির মূল্য সর্ব্বনেশে হইতে পারে। তোমাদের আর্থিক লাভের চেয়ে আমাদের ধর্ম্ম্নৈতিক লাভকেই আমরা শিরোধার্য্য করি—এবং তোমাদের সেই সম্পদ হইতে যদি বঞ্চিত হইতে হয়, সে-ও স্বীকার, তবু আমাদের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান আমাদের ধর্মলাভকে সুনিশ্চিত করিয়াছে, তাহাকে আমরা শেষ পর্য্যন্ত আঁকড়িয়া ধরিবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

 এই গেল প্রথম পত্র। দ্বিতীয় পত্রে লেখক অর্থনৈতিক-অবস্থাসম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমাদের যাহা দরকার তাহাই আমরা উৎপন্ন করি, আমরা যাহা উৎপন্ন করি, তাহা আমরাই খাই। অন্যজাতের উৎপন্নদ্রব্য আমরা চাহি নাই, আমাদের দরকারও হয় নাই। আমাদের মতে সমাজের স্থিতি রক্ষা করিতে হইলে, তাহার আর্থিক স্বাধীনতা থাকা চাই। বৃহৎ বিদেশী বাণিজ্য সামাজিক ভ্রষ্টতার একটা নিশ্চিত কারণ।

 তোমরা যাহা খাইতে চাও, তাহা তোমরা উৎপন্ন করিতে পার না, তোমাদিগকে যাহা উৎপন্ন করিতে হয়, তাহা তোমরা ফুরাইতে পার না। প্রাণের দায়ে এমনতর কেনাবেচার গঞ্জ তোমাদের দরকার, যেখানে তোমাদের কারখানার মাল চালাইতে পার, এবং খাদ্য এবং কৃষিজাত দ্রব্য কিনিতে পার। অতএব যেমন করিয়া হৌক, চীনকে তোমাদের দরকার।