পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
ভারতবর্ষ।

জনেরা ছাড়াছাড়া। কেহ কাহারো সহিত বদ্ধ নহে, তেমনি কোথাও কাহারো শিকড় নাই। তোমাদের সমাজকে তোমরা গতিশীল বলিয়া থাক-সর্ব্বদাই তোমরা চলিতেছ। প্রত্যেকেই নিজের জন্য একটা নূতন রাস্তা বাহির করা কর্ত্তব্য জ্ঞান করে। যে অবস্থার মধ্যে জন্মিয়াছ, সেই অবস্থার মধ্যে স্থির থাকাকে তোমরা অগৌরব মনে কর। পুরুষ যদি পুরুষ হইতে চায় তবে সে সাহস করিবে, চেষ্টা করিবে, লড়াই করিবে এরং জয়ী হইবে। এই ভাব হইতেই তোমাদের সমাজে অপরিসীম উদ্যমের সৃষ্টি হইয়াছে, এবং বস্তুগত শিল্পাদির তোমরা উন্নতি করিতে পারিয়াছ। কিন্তু ইহা হইতেই তোমাদের সমাজে এত অস্থিরতা, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং এইজন্যই আমাদের মতে ইহার মধ্যে ধর্ম্মভাবের অভাব;—চীনেম্যানের চোখে এইটেই বেশি করিয়া ঠেকে। তোমাদের মধ্যে কেহই সন্তুষ্ট নও—জীবনযাত্রার আয়োজন বৃদ্ধি করিতে সকলেই এত ব্যগ্র যে, কাহারো জীবনযাত্রার অবকাশ জোটে না। মানুষের মধ্যে অর্থের সম্বন্ধকেই তোমরা স্বীকার কর।

 পূর্ব্বদেশীয় আমাদের কাছে ইহা বর্ব্বরসমাজের লক্ষণ বলিয়া বোধ হয়। জীবনযাত্রার উপকরণবৃদ্ধির মাপে আমরা সভ্যতাকে মাপি না, কিন্তু সেই জীবনযাত্রার প্রকৃতি ও মূল্য দ্বারাই আমরা সভ্যতার বিচার করি। যেখানে কোন সহৃদয় ও ধ্রুব বন্ধন নাই, পুরাতনের প্রতি ভক্তি নাই, বর্তমানের প্রতিও যথার্থ শ্রদ্ধা নাই, কেবল ভবিষ্যৎকেই লুব্ধভাবে লুণ্ঠন করিবার চেষ্টা আছে, সেখানে আমাদের মতে যথার্থ সমাজই নাই। যদি তোমাদের আচার-অনুষ্ঠানের নকল না করিলে ধনে, বিজ্ঞানে ও শিল্পে তোমাদের সঙ্গে টক্কর দেওয়া না যায়, তবে আমরা টক্কর না দেওয়াই ভাল মনে করি।

 এ সকল ব্যাপারে আমাদের পদ্ধতি তোমাদের ঠিক উল্টা।