পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩০
ভারতবর্ষ।

নিজের বা পরের ইচ্ছামত বিকৃত করিলে, আমরা জগতে নিষ্ফল ও লজ্জিত হইব। সেই প্রকৃতিকেই পূর্ণপরিণতি দিলে সে অনায়াসেই বিদেশের জিনিষকে আপনার করিয়া লইতে পারিবে এবং আপনার জিনিষ বিদেশকে দান করিতে পারিবে।

 এই স্বদেশী প্রাণালীর শিক্ষার প্রধান ভিত্তি স্বার্থত্যাগপর ভৃতিনিরপেক্ষ অধ্যয়ন-অধ্যাপনরত নিষ্ঠাবান্ গুরু এবং তাহার অধ্যাপনের প্রধান অবলম্বন স্বদেশের একখানি সম্পূর্ণ ইতিহাস। এক দিন এইরূপ গুরু আমাদের দেশে গ্রামে-গ্রামেই ছিলেন—তাঁঁহাদের ‘জুতামোজা, গাড়িঘোড়া, আস্‌বাব্‌ পত্রের প্রয়োজনই ছিল না-নবাব ও নবাবের অনুকারিগণ তাঁহাদের চারিদিকে নবাবী করিয়া বেড়াইত, তাহাতে তাঁহাদের দৃক্‌পাত ছিল না, তাঁহাদের অগৌরব ছিল না। এখনো আমাদের দেশে সেই সকল গুরুর অভাব নাই। কিন্তু শিক্ষার বিষয় পরিবর্ত্তিত হইয়াছে—এখন ব্যাকরণ, স্মৃতি ও ন্যায় আমাদের জঠরালনির্ব্বাণের সহায়তা করে না এবং আধুনিক কালের জ্ঞানস্পৃহা মিটাইতে পারে না। কিন্তু যাঁহারা নূতন শিক্ষাদানের অধিকারী হইয়াছেন, তাঁহাদের চাল বিগ্‌ড়াইয়া গেছে, তাঁহাদের আদর্শ বিকৃত হইয়াছে, তাঁহারা অল্পে সন্তুষ্ট নহেন, বিদ্যাদানকে তাঁহারা ধর্ম্মকর্ম্ম বলিয়া জানেন না, বিদ্যাকে তাঁহারা পণ্যদ্রব্য করিয়া বিদ্যাকেও হীন করিয়াছেন, নিজেকেও হেয় করিয়াছেন। নব্যশিক্ষিতদের মধ্যে আমাদের সামাজিক উচ্চ আদর্শের এই বিপর্য্যয়দশা একদিন সংশোধিত হইবে—ইহা আমি দুরাশা বলিয়া গণ্য করি না। আমাদের বৃহৎ-শিক্ষিতমণ্ডলীর মধ্যে ক্রমে ক্রমে এমন দুই-চারিটি লোক নিশ্চয়ই উঠিবেন, যাহারা বিদ্যাব্যবসায়কে ঘৃণা করিয়া বিদ্যাদানকে কৌলিক ব্রত বলিয়া গ্রহণ করিবেন। তাঁহারা জীবনযাত্রার উপকরণ সংক্ষিপ্ত করিয়া, বিলাস বিসর্জন দিয়া, দেশের