পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাহ্মণ।
৩৭

 ইহা কি প্রকারের? যেমন চীরধারী যে একটি দল নিজেকে সাধু ও সাধক বলিয়া পরিচয় দেয়, তাহারা গাঁজার নেশাকে আধ্যাত্মিক আনন্দলাভের সাধনা বলিয়া মনে করে। নেশার একাগ্রতা জন্মে, উত্তেজনা হয়, কিন্তু তাহাতে আধ্যাত্মিক স্বাধীন সবলতা হ্রাস হইতে থাকে। আর সমস্ত ছাড়া যায়, কিন্তু এই নেশার উত্তেজনা ছাড়া যায় না– ক্রমে মনের বল যত কমিতে থাকে, নেশার মাত্রাও তত বাড়াইতে হয়। ঘুরিয়া নৃত্য করিয়া বা সশব্দে বাদ্য বাজাইয়া, নিজেকে উদ্‌ভ্রান্ত ও মূর্চ্ছান্বিত করিয়া যে ধর্ম্মোন্মাদের বিলাস সম্ভোগ করা যায়, তাহাও কৃত্রিম। তাহাতে অভ্যাস জন্মিয়া গেলে, তাহা অহিফেনের নেশার মত আমাদিগকে অবসাদের সময় কেবলি তাড়না করিতে থাকে। আত্মসমাহিত শান্ত একনিষ্ঠ সাধনা ব্যতীত যথার্থ স্থায়ী মূল্যবান্ কোন জিনিষ পাওয়া যায় না ও স্থায়ী মূল্যবান্ কোন জিনিষ রক্ষা করা যায় না।

 অথচ আবেগ ব্যতীত কাজ ও কাজ ব্যতীত সমাজ চলিতে পারে না। এইজন্যই ভারতবর্ষ আপন সমাজে গতি ও স্থিতির সমন্বয় করিতে চাহিয়াছিল। ক্ষত্রিয়, বৈশ্য প্রভৃতি যাহারা হাতে-কলমে সমাজের কার্য্য সাধন করে, তাহাদের কর্ম্মের সীমা নির্দিষ্ট ছিল। এইজন্যই ক্ষত্রিয় ক্ষাত্রধর্ম্মের আদর্শ রক্ষা করিয়া নিজের কর্ত্তব্যকে ধর্ম্মের মধ্যে গণ্য করিতে পারিত। স্বার্থ ও প্রবৃত্তির উর্দ্ধে ধর্ম্মের উপরে কর্ত্তব্যস্থাপন করিলে, কাজের মধ্যেও বিশ্রাম এবং আধ্যাত্মিকতালাভের অবকাশ পাওয়া যায়।

 য়ুরোপীয় সমাজ যে নিয়মে চলে, তাহাতে গতিজনিত বিশেষ একটা ঝোঁকের মুখেই অধিকাংশ লোককে ঠেলিয়া দেয়। সেখানে বুদ্ধিজীবী লোকেরা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারেই ঝুঁকিয়া পড়ে—সাধারণ লোকে অর্থোপার্জ্জনেই ভিড় করে। বর্তমানকালে সাম্রাজ্যলোলুপতা সকলকে