পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বারােয়ারি-মঙ্গল।
৯৫

বীরদিগের স্মৃতি সকলেরই পক্ষে মঙ্গলকর। কিন্তু দল বাঁধিয়া ঋণশোধকরাকে সেই স্মৃতিপালন কহে না, ইহা প্রত্যেকের পক্ষে প্রত্যহের কর্ত্তব্য।

 য়ুরোপে এই ক্ষমতা এবং মাহাত্ম্যের প্রভেদ লুপ্তপ্রায়। উভয়েরই জয়ধ্বজা একই-রকম—এমন কি, মাহাত্ম্যের পতাকাই যেন কিছু খাটো। পাঠকগণ অনুধাবন করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারিবেন, বিলাতে অভিনেতা আর্ভিঙের সম্মান পরমসাধুর প্রাপ্য সম্মান অপেক্ষা অল্প নহে। রামমোহন রায় আজ যদি ইংলণ্ডে যাইতেন, তবে তাঁহার গৌরব ক্রিকেট খেলোয়াড় রঞ্জিতসিংহের গৌরবের কাছে খর্ব্ব হইয়া থাকিত।

 আমরা কবিচরিতনামক প্রবন্ধে উল্লেখ করিয়াছি, য়ুরোপে ক্ষমতাশালী লোকের জীবনচরিত লেখার একটা নিরতিশয় উদ্যম আছে। য়ুরোপকে চরিতবায়ুগ্রস্ত বলা যাইতে পারে। কোনমতে একটা যেকোন-প্রকারের বড়লোকত্বের সুদূর গন্ধটুকু পাইলেই তাহার সমস্ত চিঠিপত্র, গল্পগুজব, প্রাত্যহিক ঘটনার সমস্ত অবর্জনা সংগ্রহ করিয়া মোটা দুই ভল্যুমে জীবনচরিত লিখিবার জন্য লোকে হাঁ করিয়া বসিয়া থাকে। যে নাচে, তাহার জীবনচরিত, যে গান করে, তাহার জীবনচরিত, যে হাসাইতে পারে, তাহার জীবনচরিত—জীবন যাহার যেমনই হোক, যে লোক কিছু-একটা পারে, তাহারই জীবনচরিত। কিন্তু যে মহাত্মা জীবনযাত্রার আদর্শ দেখাইয়াছেন, তাঁহারই জীবনচরিত সার্থক—যাঁহারা সমস্ত জীবনের দ্বারা কোন কাজ করিয়াছেন, তাঁহাদেরই জীবন আলোচ্য—যিনি কবিতা লিখিয়াছেন, গান তৈরি করিয়াছেন, তিনি কবিতা এবং গানই দান করিয়া গেছেন, তিনি জীবন দান করিয়া যান নাই, তাঁহার জীবনচরিতে কাহার কি প্রয়োজন? টেনিসনের কবিতা পড়িয়া আমরা টেনিসন্‌কে যত বড় করিয়া জানিয়াছি, তাঁহার