পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বারােয়ারি-মঙ্গল।
৯৯

 য়ুরোপে যে দল বাঁধিবার ভাব আছে, তাহার উপযোগিতা নাই, এ কথা বলা মূঢ়তা। যে সকল কাজ বলসাধ্য,—বহুলোকের আলোচনার দ্বারা সাধ্য, সে সকল কাজে দল না বাঁধিলে চলে না। দল বাঁধিয়া য়ুরোপ যুদ্ধে, বিগ্রহে, বাণিজ্যে, রাষ্ট্রব্যাপারে বড় হইয়া উঠিয়াছে, সন্দেহ নাই। মৌমাছির পক্ষে যেমন চাক-বাঁধা, য়ুরোপের পক্ষে তেমনি দল-বাঁধা প্রকৃতিসিদ্ধ। সেইজন্য য়ুবোপ দল বাঁধিয়া দয়া করে, ব্যক্তিগত দয়াকে প্রশ্রয় দেয় না; দল বাঁধিয়া পূজা করিতে যায়, ব্যক্তিগত পূজাহ্নিকে মন দেয় না; দল বাঁধিয়া ত্যাগ স্বীকার করে, ব্যক্তিগত ত্যাগে তাহাদের আস্থা নাই। এই উপায়ে য়ুরোপ একপ্রকার মহত্ত্ব লাভ করিয়াছে, অন্যপ্রকার মহত্ত্ব খোয়াইয়াছে। একাকী কর্ত্তব্যকর্ম্ম নিষ্পন্ন করিবার উৎসাহ তাহার নাই। আমাদের সমাজে প্রত্যেককে প্রত্যহই প্রত্যেক প্রহরেই ধর্ম্মপালন করিতে বাধ্য বলিয়া জানে। য়ুরোপে ধর্ম্মপালন করিতে হইলে কমিটিতে বা ধর্ম্মসভায় যাইতে হয়। সেখানে সম্প্রদায়গণই সদনুষ্ঠানে রত—সাধারণ লোকেরা স্বার্থসাধনে তৎপর। কৃত্রিম উত্তেজনার দোষ এই যে, তাহার অভাবে মানুষ অসহায় হইয়া পড়ে। দল বাঁধিলে পরস্পর পরস্পরকে ঠেলিয়া খাড়া করিয়া রাখে, কিন্তু দলের বাহিরে, নামিয়া পড়িতে হয়। আমাদের দেশে প্রত্যেকের প্রত্যহের কর্ত্তব্য ধর্ম্মকর্ম্মরূপে নির্দিষ্ট হওয়াতে আবালবৃদ্ধবনিতাকে যথাসম্ভব নিজের স্বার্থপ্রবৃত্তি ও পশুপ্রকৃতিকে সংযত করিয়া পরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করিতে হয়, ইহাই আমাদের আদর্শ। ইহার জন্য সভা করিতে বা খবরের কাগজে রিপোর্ট পাঠাইতে হয় না। এইজন্য সাধারণত সমস্ত হিন্দুসমাজে একটি সাত্ত্বিক ভাব বিরাজমান—এখানে ছোট-বড় সকলেই মঙ্গলচর্চ্চায় রত, কারণ গৃহই তাহাদের মঙ্গলচর্চ্চার স্থান। এই যে আমাদের ব্যক্তিগত মঙ্গল ভাব, ইহাকে আমরা শিক্ষার দ্বারা উন্নত, অভিজ্ঞতার দ্বারা বিস্তৃত এবং