পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১২
ভারতবর্ষ

 এখনকার ভারতসাম্রাজ্য আপিসে এবং আইনে চলে-তাহার রংচং নাই, গীতবাদ্য নাই তাহাতে প্রত্যক্ষ মানুষ নাই। ইংরেজের খেলাধুলা, নাচগান, আমোদপ্রমোদ, সমস্ত নিজেদের মধ্যে বদ্ধ-সে আনন্দ-উৎসবের উদ্ধৃত খুদকুঁড়াও ভারতরর্ষের জনসাধারণের জন্য প্রমোদশালার বাহিরে আসিয়া পড়ে না। আমাদের সঙ্গে ইংরেজের সম্বন্ধ আপিসের বাঁধা কাজ এবং হিসাবের খাতা সহির সম্বন্ধ। প্রাচ্য সম্রাটের ও নবাবের সঙ্গে আমাদের অন্নবস্ত্র, শিল্পশোভা, আনন্দউৎসবের নানা সম্বন্ধ ছিল। তাঁঁহাদের প্রাসাদে প্রমোদের দ্বীপ জলিলে তাহার আলোক চারিদিকে প্রজাদের ঘরে ছড়াইয়া পড়িত— তাহাদের তোরণদ্বারে যে নহবৎ বসিত, তাহার আনন্দধ্বনি দীনের কুটিরের মধ্যেও প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিত।

 ইংরেজ সিভিলিয়ানগণ পরম্পরের আমন্ত্রণে-নিমন্ত্রণে-সামাজিকতায় যোগদান করিতে বাধ্য, যে ব্যক্তি স্বভাবদোষে এই সকল বিনোদনব্যাপারে অপটু, তাহার উন্নতির অনেক ব্যাঘাত ঘটে। এই সমস্তই নিজেদের জন্য। যেখানে পাঁচটা ইংরেজ আছে, সেখানে আমোদ-আহলাদের অভাব নাই—কিন্তু সে আমোদে চারিদিক্‌ আমোদিত হইয়া উঠে না। আমরা কেবল দেখিতে পাই– কুলিগুলা বাহিরে বসিয়া সন্ত্রস্তচিত্তে পাথার দড়ি টানিতেছে, সহিস্‌ ডগ্‌কার্টের ঘোড়ার লাগাম ধরিয়া চামর দিয়া মশামাছি তাড়াইতেছে, মৃগয়ার সময় বাজে লোকেরা জঙ্গলের শিকার তাড়া করিতেছে এবং বন্দুকের দুটো একটা গুলি পশুলক্ষ্য হইতে ভ্রষ্ট হইয়া নেটিভের মর্ম্মভেদ করিতেছে। ভারতবর্ষে ইংরেজরাজ্যের বিপুল শাসনকার্য্য একেবারে আনন্দহীন, সৌন্দর্যহীন— তাহার সমস্ত পথই আপিস্‌-আদালতের দিকে—জনসমাজের হৃদয়ের দিকে নহে। হঠাৎ ইহার মধ্যে একটা খাপছাড়া দরবার কেন? সমস্ত শাসনপ্রণালীর সঙ্গে তাহার কোনখানে যোগ?