পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৬
ভারতবর্ষ।

 ভারতবর্ষে লেডি ডেফারিণের নামে যে সকল হাঁসপাতাল খোলা হইল, তাহার টাকা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ভারতবর্ষের প্রজারাই জোগাইয়াছে। এ প্রথা খুব ভাল হইতে পারে, কিন্তু ইহা ভারতবর্ষের প্রথা নহে—সুতরাং এই প্রকারের পূর্ত্তকার্য্যে আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে না। না করুক্, তথাপি বিলাতের রাজা বিলাতের প্রথামতই চলিবেন, ইহাতে বলিবার কথা কিছু নাই। কিন্তু কখনো দিশি কখনো বিলিতি হইলে কোনোটাই মানান্‌সই হয় না। বিশেষেত আড়ম্বরের বেলায় দিশি দস্তুর এবং খরচপত্রের বেলায় বিলিতি দস্তুর হইলে আমাদের কাছে ভারি অসঙ্গত ঠেকে। আমাদের বিদেশী কর্ত্তারা ঠিক করিয়া বসিয়া আছেন, যে প্রাচ্যহৃদয় আড়ম্বরেই ভোলে, এইজন্যই ত্রিশকোটি অপদার্থকে অভিভূত করিতে দিল্লির দরবার নামক একটা সুবিপুল অত্যুক্তি বহু চিন্তায়-চেষ্টায় ও হিসাবের বহুতর কশাকশি দ্বারা খাড়া করিয়া তুলিতেছেন—জানেন না যে, প্রাচ্যহৃদয় দানে, দয়াদাক্ষিণ্যে, অবারিত মঙ্গল-অনুষ্ঠানেই ভোলে। আমাদের যে উৎসব-সমারোহ, তাহা আহূত-অনাহূত-রবাহূতের আনন্দ-সমাগম; তাহাতে ‘এহি এহি দেহি দেহি পীয়তাং ভুজ্যতাং’ রবের কোথাও বিরাম ও বাধা নাই। তাহা প্রাচ্য আতিশয্যের লক্ষণ হইতে পারে, কিন্তু তাহা খাঁটি, তাহা স্বাভাবিক,—আর পুলিসের দ্বারা সীমানাবদ্ধ, সঙীনের দ্বারা কণ্টকিত, সংশয়ের দ্বারা সন্ত্রস্ত, সতর্ক কৃপণতার দ্বারা সঙ্কীর্ণ, দয়াহীন দানহীন যে দরবার—যাহা কেবলমাত্র দম্ভপ্রচার, তাহা পাশ্চাত্য অত্যুক্ত—তাহাতে আমাদের হৃদয় পীড়িত ও লাঞ্ছিত হয়—আমাদের কল্পনা আকৃষ্ট না হইয়া প্রতিহত হইতে থাকে। তাহা ঔদার্য্য হইতে উৎসারিত নহে, তাহা প্রাচুর্য্য হইতে উদ্বেলিত হয় নাই।

 এই গেল নকল-করা অত্যুক্তি কিন্তু নকল, বাহ্য আড়ম্বরে মূলকে ছাড়াইবার চেষ্টা করে, এ কথা সকলেই জানে। সুতরাং সাহেব যদি