পাতা:চিঠিপত্র (ঊনবিংশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অধিকাংশ লোকই যে বহুকাল ধরে আধপেটা খেয়ে আসছে তার উত্তরোত্তর সঞ্চিত পরিমাণের কথা ভালো করে ভাবি নি। আমরা যতটা খাই তাতে না হয় মরণ, না হয় বচন। কেননা, শুধু কেবল নিশ্বাস নেওয়াকেই তো বাঁচা বলে না। শিশুর মৃত্যুসংখ্যা আমাদের দেশে খুবই বেশি, কিন্তু যে শিশু মরে না সে যে চিরজীবন সম্পূণ পরিমাণে বেচে থাকবার মতো আহার পায় না সেইটেই দুঃখ । কেবলমাত্র আর্থিক দিক হতে যদি এর ফল দেখি, তা হলে দেখা যাবে আমাদের দেশে মজ্জায় কর্মোদ্যম দুর্বল হওয়াতে অধিক মূল্যে অল্প ফল পাই। অন্য দেশে একজন যে কাজ করে, আমাদের দেশে সে কাজে হয়তো চার জনের দরকার হয়। এতে কেবল কাজের পরিমাণ হ্রাস হয় তা নয়, কাজের গুণও নষ্ট হয়। কেননা, কাজের শক্তি থাকলে সে শক্তি খাটাতে আনন্দ পাই, কাজে ফাকি দিতে সহজেই ইচ্ছা হয় না। কর্মসম্বন্ধে সেই সত্যপরতাই কাজের নৈতিক গুণ। যুরোপীয় মনিব প্রায়ই অভিযোগ করেন যে আমাদের দেশের লোক কাজে শৈথিল্য করে, তাদের কেবলই পাহারা এবং শাসনের উপর রাখতে হয়। বংশানুক্রমে প্রভুদের নিজেদের দেহ সহজেই পুষ্ট বলে এ কথা তারা মনেই করতে পারে না যে এ দেশে কর্তব্য এড়াবার ইচ্ছার উৎপত্তি প্রধানতই শরীর পোষণের অভাব হতে। দেশের লোক ম্যালেরিয়ায় মরছে এবং জীবন্মত হয়ে আছে তারও কারণ ওই, শুধু বেচারা মশাকে দোষ দিলে চলবে না। কী করে আমরা বাঁচব এ কথা ভাববার নয়, কেননা, কোনোমতে বাঁচার চেয়ে মরা ভালো। কী করে আমরা পুরোপুরি বাঁচব সেইটেই ভাববার কথা। কৃশতাবশত জীবনধারণে আমাদের সম্পূর্ণ গা নেই বলে সত্যপর হচ্ছি না। এতে সমস্ত দেশের বাহ্যিক ও আন্তরিক যে লোকসান হচ্ছে, সবশুদ্ধ জড়িয়ে যে কম কাজ হচ্ছে, কম ফসল ফলছে, কম বিঘ্ন কাটছে, প্রাণের স্রোতোবেগে মন্থরতা ঘটছে, অঙ্ক দিয়ে কি তার পরিমাণ পাওয়া যায়। শরীর মনের উপজাত যে > ° の