পাতা:দুই বোন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
দুই বোন

সম্প্রতি হঠাৎ এ বাড়িতে আনন্দের যে বান ডেকে এসেছিল সেটা গেছে সম্পূর্ণ ভাঁটিয়ে, অথচ পূর্বে ওদের যে-একটা সহজ দিনযাত্রা ছিল সেও রইল না।

 একদা শশাঙ্ক নিজের চেহারার চর্চায় উদাসীন ছিল। নাপিতকে দিয়ে চুল ছাঁটাত প্রায় ন্যাড়া ক’রে। আঁচড়াবার প্রয়োজন ঠেকেছিল সিকির সিকিতে। শর্মিলা তাই নিয়ে অনেকবার প্রবল বাগবিতণ্ডা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ইদানীং ঊর্মির উচ্চহাস্যসংযুক্ত সংক্ষিপ্ত আপত্তি নিষ্ফল হয়নি। নূতন সংস্করণের কেশোদ্গমের সঙ্গে সুগন্ধি তৈলের সংযোগ-সাধন শশাঙ্কর মাথায় এই প্রথম ঘটল। কিন্তু তার পর আজকাল কেশোন্নতিবিধানের অনাদরেই ধরা পড়ছে অন্তর্বেদনা। এতটা বেশি যে, এ নিয়ে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য তীব্র হাসি আর চলে না। শর্মিলার উৎকণ্ঠা তার ক্ষোভকে ছাড়িয়ে গেল। স্বামীর প্রতি করুণায় ও নিজের প্রতি ধিক্কারে তার বুকের মধ্যে টন্‌টন্‌ করে উঠছে, রোগের ব্যথাকে দিচ্ছে এগিয়ে।

 ময়দানে হবে কেল্লার ফৌজদারের যুদ্ধের খেলা। শশাঙ্ক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করতে এল, “যাবে ঊর্মি, দেখতে। ভালো জায়গা ঠিক করে রেখেছি।”