পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ..م ڈ সাম্য । এ জগতে সকলি যে সমান, কেহ যে ছোট বড় নহে, তাহা প্রেমের চক্ষে ধরা পড়িল । এই নিমিত্ত যখন দেখা যায়, যে, একজন লোক কুৎসিং মুখের দিকে অতৃপ্ত নয়নে চাহিয়া আছে, তখন আর আশ্চৰ্য্য হইবার কোন কারণ নাই—অার একজনকে দেখিতেছি সে সুন্দর মুখের দিকে ঠিক তেমনি করিয়াই চাহিয়া আছে, ইহাতেও আশ্চৰ্য্য হইবার কোন কথা নাই । অমুরাগের প্রভাবে উভয়ে মানুষের এমন স্থানে গিয়া পৌছিয়াছে, যেখানে সকল মানুষই সমান, যেখানে কাহারও সহিত কাহারো এক চুল ছোট বড় নাই, যেখানে সুন্দর কুৎসিৎ প্রভৃতি তুলনা আর খাটেই না। সীমা এবং তুলনীয়তা কেবল উপরে, একবার যদি ইহা ভেদ করিয়া ভিতরে প্রবেশ করিতে পার ত দেখিবে সেখানে সমস্তই একাকার, সমস্তই অনন্ত। এতবড় প্রাণ কাহার আছে সেখানে প্রবেশ করিতে পারে, বিশ্বচরাচরের মহাসমুদ্রে অসীম ডুব ডুবিতে পারে। প্রেমে সেই সমুদ্রে সস্তরণ করিতে শিখায়—যাহাকেই ভালবাস না কেন তাহাতেই সেই মহা স্বাধীনতার নূ্যনাধিক আস্বাদ পাওয়া যায়! এই যে শূন্য অনন্ত আকাশ ইহাও আমাদের কাছে সীমাবদ্ধরূপে প্রকাশ পায়, মনে হয় যেন একটি অচল কঠিন স্বগোল নীল মণ্ডপ আমাদিগকে ঘেরিয়া আছে ; যেন খানিক দূর উঠিলেই আকাশের ছাতে আমাদের মাথা ঠেকিবে । কিন্তু ডানা থাকিলে দেখিতাম ঐ নীলিমা আমাদিগকে বাধা দেয় না, ঐ সীমা আমাদের চোখেরই সীমা ; যদিও মণ্ডপের উদ্ধে আরও মণ্ডপ দেখিতাম, তদুদ্ধে উঠিলে আবার আর-একটা মণ্ডপ দেখিতাম, তথাপি জানিতে পারিতাম যে, উহারা আমাদিগকে মিথ্যা ভয় দেখাইতেছে, উহার কেবল ফাকি মাত্র । আমাদের স্বাধীনতার বাধা আমাদের চক্ষু, কিন্তু বাস্তবিক বাধা কোথাও নাই । স্বদেশ । আমার একজন বন্ধু দাৰ্জিলিং কাশ্মীর প্রভৃতি নানা রমণীয় দেশ ভ্রমণ করিয়া আসিয়া বলিলেন—বাঙ্গালার মত কিছুই লাগিল না। কথাটা শুনিয়া অধিকাংশ লোকই হাসিবেন । কিন্তু হাসিবার বিশেষ কারণ দেখিতেছি না। বরং র্যাহারা বলেন বাঙ্গালায় দেখিবার কিছুই নাই, সমস্তটাই প্রায় সমতল স্থান, পাহাড় পৰ্ব্বত প্রভৃতি বৈচিত্র্য কিছুই নাই, দেশটা দেখিতে ভালই নহে, তাহাদের কথা শুনিলেই বাস্তবিক