পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অালোচনা 8వి সমস্তই তাহাদের নিকটে ঘটনা মাত্র ছিল। কিন্তু প্রতিদিন অবিশ্রাম দেখিতে দেখিতে, অবিশ্রাম শুনিতে শুনিতে ক্রমে তাহাদের চক্ষুর পশ্চাতে আরেক চক্ষু বিকশিত হইল, তাহাদের কর্ণের পশ্চাতে আরেক কর্ণ উদঘাটিত হইল। ক্রমে তাহারা ফুল দেখিতে পাইল, গান শুনিতে পাইল। ধৈর্য্যই সৌন্দর্য্যের অস্ত্র । পুরুষদের ক্ষমতা আছে, তাই এত কাল ধরিয়া রমণীদের উপরে অনিয়ন্ত্রিত কর্তৃত্ব করিয়া আসিতেছিল। রমণীর আর কিছুই করে নাই, প্রতিদিন তাহাদের সৌন্দৰ্য্যখানি লইয়া ধৈর্য্য সহকারে সহিয়া আসিতেছিল। অতি ধীরে ধীরে প্রতিদিন সেই সৌন্দৰ্য্য জয়ী হইতে লাগিল । এখন দানব-বল সৌন্দৰ্য্য-সীতার গায়ে হাত তুলিতে শিহরিয়া উঠে। সভ্যতা যখন বহুদূর অগ্রসর হইবে, তখন বৰ্ব্বরের কেবলমাত্র শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতামাত্রের পূজা করিবে না। তখন এই স্নেহপূর্ণ ধৈর্য্য, এই আত্মবিসর্জন, এই মধুর সৌন্দৰ্য্য, বিনা উপদ্রবে মচুন্য-হৃদয়ে আপন সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করিয়া লইবে । তখন বিষ্ণুদেবের গদার কাজ ফুরাইবে, পদ্ম ফুটিয়া উঠিবে। জ্ঞানদাসের গান । পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, সৌন্দর্ঘ্য পৃথিবীতে স্বর্গের বার্তা আনিতেছে। যে বধির, ক্রমশ তাহার বধিরতা দূর হইতেছে। বৈষ্ণব জ্ঞানদাসের একটি গান পাইয়াছি, তাহাই ভাল করিয়া বুঝিতে গিয়া আমার এত কথা মনে পড়িল । মুরলী করাও উপদেশ । যে রন্ধে যে ধ্বনি উঠে জানহ বিশেষ । কোন রন্ধে বাজে বঁাশী অতি অনুপাম । কোন রন্ধে, রাধা বলে ডাকে আমার নাম । কোন রন্ধে বাজে বঁাশী সুললিত ধ্বনি । কোন রন্ধে, কেক শব্দে নাচে ময়ুরিণী ॥ কোন রন্ধে, রসালে ফুটয়ে পারিজাত । কোন রন্ধে, কদম্ব ফুটে হে প্রাণনাথ । কোন রন্ধে, বড় ঋতু হয় এককালে । কোন রন্থে নিধুবন হয় ফুলে ফলে । কোন রন্ধে, কোকিল পঞ্চম স্বরে গায় । একে একে শিখাইয়া দেহ শু্যাম রায় ।