পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা 3S সঙ্গীত। সে কল্পনাও করিতে পারে না কোথাও পার্থী ডাকে, কোথাও সূর্য্যের কিরণ বিকীরিত হয় । অনুরাগেই যে যথার্থ স্বাধীনতা তাহার একটা প্রমাণ দেওয়া যাইতে পারে। সম্পূর্ণ নূতন লোকের মধ্যে গিয়া পড়িলে আমরা যেন নিশ্বাস লইতে পারি না, হাত পা ছড়াইতে সঙ্কোচ হয়, যে কেহ লোক থাকে সকলেই যেন বাধার মত বিরাজ করিতে থাকে, তাহারা সদয় ব্যবহার করিলেও সকল সময়ে মনের সঙ্কোচ দূর হয় না। তাহার কারণ, একমাত্র অঙ্কুরাগের অভাববশতঃ আমরা তাহাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিতে পাই না, যেখানে স্বাধীনতার যথার্থ বিচরণ-ভূমি সে স্থান আমাদের নিকটে রুদ্ধ । আমরা কেবলি তাহাদের নাকে চোখে মুখে, আচারে ব্যবহারে, নূতন ধরণের কথায় বাৰ্ত্তায় হু চট ঠোকর ধাক্কা খাইতে থাকি । পুরাতনের নূতনত্ব। অতএব দেখা যাইতেছে জগতের সমস্ত দৃশ্বের মধ্যে অনন্ত অদৃশ্ব বৰ্ত্তমান। নিত্যনূতন নামক যে শব্দটা কবির ব্যবহার করিয়া থাকেন সেটা কি নিতান্ত একটা কথার কথা, একটা আলঙ্কারিক উক্তি মাত্র । তাহার মধ্যে গভীর সত্য আছে। অসীম যতই পুরাতন হউক না কেন তাহার নূতনত্ব কিছুতেই ঘুচে না! সে যতই পুরাতন হইতে থাকে ততই বেশী নূতন হইতে থাকে, সে দেখিতে যতই ক্ষুদ্র হউক না কেন প্রত্যহই তাহাকে অত্যন্ত অধিক করিয়া পাইতে থাকি। এই নিমিত্ত যথার্থ যে প্রেমিক সে আর নূতনের জন্য সৰ্ব্বদা লালায়িত নহে, শুদ্ধ তাহাই নয়, পুরাতন ছাড়িয় সে থাকিতে পারে না। কারণ নূতন অতি ক্ষুদ্র, পুরাতন অতি বৃহৎ । পুরাতন যতই পুরাতন হইতে থাকে ততই তাহার অসীম বিস্তার প্রেমিকের নিকট অবারিত হইতে থাকে, হৃদয় ততই তাহার মৰ্ম্মস্থানের অভিমুখে ক্রমাগত ধাবমান হইতে থাকে, ততই জানিতে পারা যায় হৃদয়ের বিচরণক্ষেত্র অতি বৃহৎ, হৃদয়ের স্বাধীনতার কোথাও বাধা নাই । যে ব্যক্তি একবার এই পুরাতনের গভীরতার মধ্যে মগ্ন হইতে পারিয়াছে, এই সাগরের হৃদয়ে সন্তরণ করিতে পারিয়াছে, সে কি আর ছোট ছোট ব্যাংগুলার আনন্দ-কল্লোল শুনিয়া প্রতারিত হইয়া নূতন নামক সঙ্কীর্ণ কৃপটার মধ্যে আপনাকে বদ্ধ করিতে পারে ।